"ভারত সন্ধানে" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: উনিশ শতকের শুতকীর্তি রাষ্ট্রনীতিবিদ বেঞ্জামিন ডিসরেলি একবার লিখেছিলেন, সাধারণ মানুষ যখন কারাগারে কি নির্বাসনে যায়, বেঁচে থাকলেও তারা বাঁ... See more
TK. 1,170
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
কমিয়ে দেখুন
বাংলাদেশে এই প্রথম অনলাইন বাণিজ্য মেলা রকমারিতে। ১ লক্ষাধিক পণ্যে ৭৫% পর্যন্ত ছাড়! সাথে 100+ Bundle Deal, Buy1 Get1, আর Free Shipping নির্দিষ্ট পণ্যে!
বাংলাদেশে এই প্রথম অনলাইন বাণিজ্য মেলা রকমারিতে। ১ লক্ষাধিক পণ্যে ৭৫% পর্যন্ত ছাড়! সাথে 100+ Bundle Deal, Buy1 Get1, আর Free Shipping নির্দিষ্ট পণ্যে!
"ভারত সন্ধানে" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: উনিশ শতকের শুতকীর্তি রাষ্ট্রনীতিবিদ বেঞ্জামিন ডিসরেলি একবার লিখেছিলেন, সাধারণ মানুষ যখন কারাগারে কি নির্বাসনে যায়, বেঁচে থাকলেও তারা বাঁচে নৈরাশ্যে জীবন্বত হয়ে, আর বিদ্যাব্রতী মানুষের পক্ষে সেই দিনগুলিই হয় জীবনের সবথেকে সুখের দিন। জওহরলাল নেহরুর ক্ষেত্রে কথাটা যেন অন্যভাবে সত্যি। দীর্ঘ কারাবাসের দিনগুলি তাঁর নিজের পক্ষে যত ক্লেশকর ও দুঃসহই হােক, এমন তিনটি গ্রন্থ তিনি বিভিন্ন পর্বের কারাজীবনের অন্ধকার অন্তরালে বসে রচনা করে গেছেন, যার প্রত্যেকটির মধ্যে নিহিত চিরকালের আলােকদীপ্তি। ‘ভারত সন্ধানে’ এমনই এক উজ্জ্বল গ্রন্থ। আমেদনগর দুর্গের কারাশিবিরে লেখা এই গ্রন্থ ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত। সভ্যতা ও সংস্কৃতির যে-বিরাট উত্তরাধিকার ভারতের মতাে প্রাচীন এক ভূখণ্ডে জন্মসূত্রে আমাদের উপর বর্তেছে, তিনি শুধু তারই স্বরূপটিকে নতুন করে আবিষ্কার করেননি এই মহাগ্রন্থে, একইসঙ্গে সমকালীন ভারতের উপর এর প্রভাবটিকেও করাতে চেয়েছেন অনুভবগগাচর। চেয়েছেন, ভবিষ্যৎ ভারতের আদর্শ ভাবমূর্তি সম্পর্কেও একটি স্বচ্ছ ধারণা গড়ে দিতে আত্মজীবনীর মতাে নিঃসংকোচ এই আলােচনা, গল্পের মতাে কৌতুহলকর, সাহিত্যের মতাে স্বাদু। ইতিহাসচর্চা যে আত্মচর্চার অঙ্গ, ইতিহাস-সন্ধান যে আত্মানুসন্ধান, ব্যক্তি ও ইতিহাস যে পরম্পরসম্পৃক্ত ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী জওহরলাল সেই তত্ত্বটিকেও যেন এ-গ্রন্থে করে গেলেন সূচিত ও প্রতিষ্ঠিত। স্বাধীনতা এসে যখন ভবিষ্যতের নানা নূতন দিক খুলে দেবে, অব্যবহিত অতীতের গ্লানি ও ব্যর্থতা যখন দূর হয়ে যাবে—তখন ভারত নিজেকে আবার নূতন করে পাবে। গভীর আত্মপ্রত্যয়ে সে অগ্রসর হয়ে চলবে সামনের দিকে। পুরাতন ঐতিহ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত ভারত নব নব দেশ ও জাতির কাছ থেকে নূতন নূতন শিক্ষা গ্রহণ করবে ও সবার সঙ্গে সহযােগিতা করবে। আজ একদিকে সে প্রাচীন আচারে অন্ধবিশ্বাসী ও অপর দিকে নির্বিচারে বিদেশী হাবভাব অনুকরণেই ব্যস্ত। এ দুটোর কোনােটাতেই তার শান্তির আশ্বাস নেই ; কোনােটাই তাকে জীবনের দিকে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে দিতে পারবে না। এটা তাে বােঝাই যাচ্ছে যে ভারতকে আজ তার প্রাচীনতার খােলস ত্যাগ। করে বেরিয়ে আসতে হবে এবং আধুনিক যুগের জীবন ও ধর্মধারায় সক্রিয় অংশ গ্রহণ করতে হবে। অপর দিকে এও সত্যি যে সত্যিকার আত্মিক কিংবা সাংস্কৃতিক উন্নতি অনুকরণের দ্বারা সম্ভবপর হতে পারে না। জনসাধারণ থেকে কিংবা জাতীয় জীবনের উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন মুষ্টিমেয় কয়েকজন। এই অনুকরণের নেশায় মেতে থাকতে পারে। সত্যকার সংস্কৃতি, বহির্জগৎ থেকে যতই প্রেরণা আহরণ করুক না কেন, একেবারে দেশজ জিনিস, দেশের জনসাধারণের উপরই এর ভিত্তি। বিদেশের মানদণ্ড দিয়ে সব যদি আমরা পরিমাণ করে দেখতে যাই, তাহলে শিল্প তথা সাহিত্য দেশের জীবনধারা থেকে বিচ্যুত হয়ে মৃতকল্প হতে বাধ্য।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ ও স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর ব্যারিস্টারি পেশা ছাড়াও আরেকটি পরিচয় আছে। শুধু ভারতীয় উপমহাদেশই নয়, বিশ্বপাঠকের কাছে তিনি একজন সমৃদ্ধ লেখক। পণ্ডিত নেহরু এলাহাবাদে জন্মগ্রহণ করেন, ১৮৮৯ সালের ১৪ই নভেম্বর। পনেরো বছরের কিশোর নেহরু বিলেতে পাড়ি জমান, প্রাথমিক শিক্ষার পরের পাটটা বিলেতেই সম্পন্ন হয়। বিলেতে তিনি পড়াশোনা করেছেন হ্যারো ও কেম্ব্রিজে। পড়াশোনা শেষ করার পর পেশা হিসেবে বেছে নেন ব্যারিস্টারিকে। তিনি দেশে ফেরেন ১৯১২ সালে। ফেরার পরই সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন, সেসময় বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করেছে। অনেকদিন বিদেশে থাকার ফলে অন্যান্য দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের গল্প তাঁকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করে এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে সফলতার মুখ দেখবার জন্য তিনি উদগ্রীব হয়ে পড়েন। অসহযোগ আন্দোলনের সময়টাতে দু’বার কারাবরণও করেন নেহরু। মহাত্মা গান্ধী দ্বারা তিনি বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত ছিলেন। জওহরলাল নেহরু এর বই সমগ্র পড়লে তাঁর ব্যক্তিজীবনের দর্শন, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে অনেকটাই জানতে পারা যায়। কন্যা ইন্দিরা গান্ধীর ছোটবেলায় তাঁর কাছে কিছু চিঠি লিখেছিলেন নেহরু। সে চিঠিগুলো পরে বই আকারে প্রকাশ পায়, ‘লেটারস ফ্রম অ্যা ফাদার টু হিজ ডটার’ নামে; যা পরবর্তীতে বাংলা ভাষায় ‘বাবার চিঠি’, ‘মেয়ের কাছে বাবার চিঠি’ বা ‘কল্যাণীয়াসু ইন্দু’ নামে অনূদিত হয়েছে। শিশু-কিশোরবান্ধব এই বইটিতে পৃথিবীর ইতিহাস, দর্শন সম্পর্কে সহজ ভাষায় অনেক কিছু বলা হয়েছে যা কি না অনেক কম বয়সেই শিশুদের মনের দরজা-জানালা খুলে দিতে ভূমিকা রাখতে পারে। জওহরলাল নেহরু এর বই সমূহ সাধারণত ইতিহাসকেন্দ্রিক ও তাঁর রাজনীতির অভিজ্ঞতা নিয়ে রচিত। ‘পৃথিবীর ইতিহাস’, ‘দ্য ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’, ‘টুওয়ার্ড ফ্রিডম’ বইগুলো তাঁর বেশ বিখ্যাত লেখনীর অন্তর্ভুক্ত। এসব বইয়ের তালিকায় তাঁর আত্মজীবনীও রয়েছে।
দীর্ঘ কারাবাসের দিনগুলি তাঁর নিজের পক্ষে যত ক্লেশকর ও দুঃসহই হােক, এমন তিনটি গ্রন্থ তিনি বিভিন্ন পর্বের কারাজীবনের অন্ধকার অন্তরালে বসে রচনা করে গেছেন, যার প্রত্যেকটির মধ্যে নিহিত চিরকালের আলােকদীপ্তি। ‘ভারত সন্ধানে’ এমনই এক উজ্জ্বল গ্রন্থ।