বাগর্থ আমাদের শব্দজগৎ। বাক্ আর অর্থ কবির চোখে অর্ধনারীশ্বর। তবে সততই মনে হয়, এরা একে অন্যকে ছাড়িয়ে দূরে দাঁড়িয়ে পরস্পর ভ্রুকুটি করছে অথবা হাসছে কৌতুকের হাসি। ওই কৌতুকটুকুই শব্দশক্তির বিদ্যুত্তরঙ্গ। বাক্, অর্থ আর কৌতুকের সেই বিবিধ অঙ্গের এক অনন্য লীলা এই গ্রন্থের সম্পদ। ‘দেশ’ পত্রিকার একটি পাতায় বছর তিনেক ধরে প্রকাশিত হয়েছিল বাগর্থকৌতুকী। শব্দসংসারের বহু রহস্য ধরা পড়েছিল সেই সব মিতায়তন অথচ বিবিধ মননে ভরপুর রচনাসমূহে। ভট্টোজি ছদ্মনামের আড়ালে বহুভাষাবিদ লেখক জ্যোতিভূষণ চাকী, কেবল এই শব্দনির্ভর রচনাগুলির মাধ্যমে, পাঠকদের স্মৃতিকে উসকে দিয়েছেন বহুতর ভাবনায়। বাগর্থকৌতুকীর প্রতিটি রচনাই বিষয়বৈচিত্র্যে ভরপুর। আদামাদা, উদগমন, দ্বাদশ খেলােয়াড়, মেগাফ্লপ, সিম্পিউটার, প্রেসটিজে গ্যামাকসিন, সিডিরােম, ক্লিশে, ভেলপুরি, ক্যারিশ্ম, হিমালয়ান ব্লান্ডার, চিরুনি তল্লাশি, তালিবান, ঘটি-বাঙাল, চিংড়ি-ইলিশ, রিগিং-র্যাগিং এবং এরকম আরও বহুশব্দ বা শব্দগুচ্ছ দৈনন্দিন জীবন থেকে অথবা খবর কাগজ এবং সাহিত্য থেকে চয়ন করেছেন লেখক। তারপর সেই শব্দের উৎস, ব্যুৎপত্তি, ধ্বনি, প্রয়ােগ ইত্যাদি নিয়ে মনােরম ভঙ্গিতে আলােচনার বিস্তার ঘটিয়েছেন। আবার সেই শব্দের সূত্রে এসেছে, কোনও লােকশ্রুতি, লােকস্মৃতি কিংবা কৌতুকাবহ চূর্ণকাহিনী। প্রতিটি রচনাই স্বাদু। ফলে কোথাও এগুলি শুষ্ক ব্যাকরণে পরিণত হয়নি। সংস্কৃত, পালি, প্রাকৃত, বাংলা, হিন্দি, দেশজ, আরবি, ফারসি, উর্দু প্রভৃতি ভাষা তাে আছেই, সেই সঙ্গে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অন্যান্য ভাষাও বাগর্থকৌতুকীর রচনাগুলিতে যাওয়া-আসা করেছে অবলীলায়। এই গ্রন্থে বিধৃত হয়ে রইল বিপুল শব্দজগতের এক অনাবিল রম্য-পরিচয়।