‘ভারতের অধঃপতন’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ এই মুহুর্তে আমাদের দেশে এমন কিছু মানুষ আছেন যাঁরা ভালবাসা ও ঘূণা—এই দুয়েরই প্রাপক। যেমন এদেশের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক টি. এন. শেষন। যারা গণতন্ত্রকে ধবংস করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে এক নীতিনিষ্ঠ ও ভয়শূন্য সংগ্রামের জন্যে তিনি বহুখ্যাত, বহুনিন্দিত এবং বহু আলোচিত। একথা আজি সকলেই স্বীকার করেন, টি. এন. শেষন এক স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত ব্যক্তিত্ব। “ভারতের অধঃপতন”-এমন নামের একটি বই কেন তিনি লিখলেন সে-সম্পর্কে ‘লেখকের দু একটি কথা”-য় শোষন বলছেন, ‘বহু বিনিদ্র রজনী আমি যাপন করেছি দেশের চারিত্রিক অবনতির কথা ভেবে, আর এই ভেবে, যাতে আমাদের চারিত্রশক্তি আবার পুনরুজ্জীবিত হয়, তার জন্যে আমি কী করতে পারি। আমার দুশ্চিন্তা-দুভাবনা অনেক কিছু নিয়ে, বহু বিষয়ে পরিব্যাপ্ত। তাই মনে হল, আমার ভাবনা-চিন্তাগুলো স্পষ্ট করে তুলতে, সবচেয়ে ভাল হয়, যদি আমি কাগজে-কলমে সেগুলো লিখে ফেলি। আসলে, এটাই হল এই বইখানির জন্মের ইতিহাস।’ এই গ্রন্থের মূল বিষয়গুলি হল: নানা প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয়ের ভয়াবহতা, জনজীবনে ক্রমবর্ধমান অপরাধপ্রবণতা, ভারতের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ধারার অবনমন, দরিদ্র ও অবহেলিতদের প্রতি নিপীড়ন, এবং নির্বাচন-পদ্ধতির সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা নানা বিশৃঙ্খলা। এই বইয়ের প্রথম ভাগে আছে, আমলা, বিচারবিভাগ, দ্বিতীয় ভাগে ভারতের অর্থনীতি, বিভিন্ন খাতে অর্থবণ্টন (বাজেট), পরিবেশ, বিজ্ঞান, প্রতিরক্ষা ও শিল্প প্রভৃতি বিষয়ে লেখকের তীব্ৰ কটাক্ষ। তৃতীয় ভাগে শেষন গভীর দুঃখের সঙ্গে বলেছেন, আমাদের মহান ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরম্পরার অবমূল্যায়নের কথা। এবং সেই সঙ্গে একটি কঠিন প্রশ্নও রেখেছেন: ভারতীয় বলতে কি বোঝায়? সর্বশেষ ভাগে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের আলোচ্য বিষয়, এদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার নানা বিচ্যুতির প্রসঙ্গ এবং কীভাবে একে ত্রুটিমুক্ত করা যায় তার সম্ভাব্য প্রক্রিয়া। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে যাঁরা ভাবেন, চিন্তা করেন, তাঁরা অবশ্যই এ বই পড়বেন। কেননা, এই গ্রন্থের রচয়িতা একজন প্রতিবাদী মানুষ, যিনি কয়েকযুগ ধরে উচ্চতম সরকারি পদে আসীন থেকে বহু অভিজ্ঞতা লাভ করে এই গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর জ্বলন্ত প্ৰতিবাদ, অভিজ্ঞতা, গঠনমূলক সুচিন্তার ফসল ‘ভারতের অধঃপতন’।
সূচিপত্র লেখকের দু-একটি কথা - ৭ উপক্ৰমণিকা কোথা থেকে কোথায় - ১৩ প্রথম ভাগ: প্রাসাদ ভেঙে পড়ছে ১. জাল-জুয়াচুরির রাজনীতি - ২১ ২. সকলের জন্যে সুবিচার – ৩৩ ৩. আন-সিভিল সার্ভিস – ৪০ ৪. কাগুজে বাঘ - ৫৬ দ্বিতীয় ভাগ: নিরুদ্দেশ যাত্রা ৫. ভুলের দেশে পরিকল্পনা – ৬৭ ৬. বিজ্ঞানে ব্ল্যাক হোল - ৮৫ ৭. কিষাণ ও কর্মভূমি - ৮৮ ৮. মানুষে-মানুষে ছয়লাপ - ৯৭ ৯. বিপন্ন পরিবেশ – ১১২ ১০. হিংসায় উন্মত্ত - ১২০ তৃতীয় ভাগ: বিমথিত আত্মা ১১. মণ্ডল, মসজিদ, মোক্ষ – ১৩৫ ১২. তু চীজ বাড়ী হ্যায় মস্ত মস্ত - ১৪৫ চতুর্থ ভাগ: ভবিষ্যৎকে রক্ষা করা ১৩. নির্বাচন: টাকার ছড়াছড়ি – ১৫৭ ১৪. সামনে কী কাজ - ১৬৬ পরিশিষ্ট অন্তিম দশা – ১৭৭ সংযোজন-ক - ১৭৯ সংযোজন-খ - ১৮৫ নির্বাচনী ব্যয়ের হিসেব দাখিলের প্রোফর্মা - ১৮৮ নির্বাচিত উল্লেখপঞ্জী – ১৯১ নির্ঘণ্ট - ১৯৩
তিরুনোল্লাই নারায়ণাইয়ার শেষনের জন্ম কেরালার পালঘাটে ১৯৩২-এ । মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। মাদ্রাজ ক্রিস্টিয়ান কলেজে তিন বছর অধ্যাপনা । এরপর হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ । ১৯৫৩-তে আই. পি. এস এবং ১৯৫৪-য় আই. এ. এস পরীক্ষায় প্রথম স্থানাধিকারী । শ্ৰীমতী জয়লক্ষ্মীর সঙ্গে ১৯৫৯-এ বিবাহ। তামিলনাডু ক্যাডারের আই. এ. এস শ্ৰীশেষন পর্যায়ক্রমে সেই রাজ্যের সরকারি প্রশাসনের উচ্চ থেকে উচ্চতর পদে আসীন হন। পরবর্তীকালে তিনি ভারত সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন ; আণবিক মন্ত্রকের অধিকর্তা ; বাঙ্গালোরে অবস্থিত মহাকাশ মন্ত্রকের যুগ্মসচিব ; তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস কমিশনের সদস্য ; মহাকাশ মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব ; প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা সচিব (১৯৮৭) ; প্রতিরক্ষা সচিব (১৯৮৮) ; ক্যাবিনেট সচিব এবং প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য (১৯৮৯) । ১৯৯০ সালে তিনি মুখ্য নিবাচন আধিকারিকের পদে নিযুক্ত হন । নিজেকে রহস্য করে শ্ৰীশেষন বলেন “অ্যালসেশন” । তিনি কথা বলতে পারেন ন’টি ভাষায় । ভালবাসেন কর্তব্যনিষ্ঠ জীবন ও নীরব কর্মপ্রবাহের পরিবেশ । শব্দসন্ধান করতে ভালবাসেন । ব্ল্যাক-টি পানে আসক্ত শ্ৰীশেষন কণাটকী সঙ্গীতের একজন মুগ্ধ শ্রোতা ।