প্রি-অর্ডারের এই পণ্যটি 28 Dec 2024 তারিখে প্রকাশ পেতে পারে বলে প্রকাশনী থেকে জানানো হয়েছে। তবে বিশেষ কোন কারণে প্রকাশিত হওয়ার তারিখ পরিবর্তন হতেও পারে.
মুসলমানদের জীবন পরিচালনার জন্য প্রধান দু’টি উৎস হচ্ছে আল-কুরআন ও আল-হাদীছ। হাদীছ মূলতঃ আল-কুরআনের ব্যাখ্যা। উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা রা. রাসূলুল্লাহ সা.-এর জীবনের সমগ্র কার্যকলাপকে আল-কুরআনের বাস্তব বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কাজেই মানব জীবন বিশেষ করে মুসলিমদের জীবনে হাদীছের গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্য পৃথিবী ধ্বংসের পূর্ব পর্যন্ত হাদীছের পঠন-পাঠন অব্যাহত রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।
রাসূলুল্লাহ সা. এবং সাহাবীগণের যুগে হাদীছ মৌখিক বর্ণনার পদ্ধতিতে সংরক্ষিত হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে বিশেষকরে হিজরি প্রথম শতাব্দির মধ্যভাগে ইসলামি রাষ্ট্রে যে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় তার সূত্র ধরে শী’আ, খারিজী ও রাফিযীসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। এ সকল সম্প্রদায় তাদের মতবাদ প্রচারের জন্য হাদীছ জালকরণের আশ্রয় নেয়। তারা তাদের মতের সমর্থনে যে কোনো কথা রাসূলুল্লাহ সা.-এর বাণী হিসেবে প্রচারের অপপ্রয়াস চালায়। হিজরি দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দিতে তাদের এই কার্যক্রম আরো বিস্তৃতি লাভ করে।
বিজ্ঞ মুহাদ্দিছগণ তাদের এই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিরোধ ব্যুহ গড়ে তোলেন। তাঁরা হাদীছের সনদ এবং মতন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার মাধ্যমে মাউদূ‘ ও ত্রুটিপূর্ণ হাদীছকে সাহীহ হাদীছ থেকে আলাদা করার জন্য কিছু মূলনীতি প্রণয়ন করেন। একেই হাদীছের ‘মূলনীতি অভিজ্ঞান’ বলে। এ মূলনীতি অভিজ্ঞানের মাধ্যমে হাদীছ সাহীহরূপে সংকলিত হয়ে ইসলামি আইনের দ্বিতীয় উৎস হিসেবে এর বিশ্বস্ততা নিশ্চিত হয়। হাদীছ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জ্ঞান লাভ করতে হলে ‘উলূমুল হাদীছ বিষয়ে অবগত হওয়া নবীন ও অনুসন্ধিৎসু ব্যক্তিদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। এতে যেমন পার্থিব-জীবনে কাঙ্খিত উদ্দেশ্য হাসিল হবে, তেমনি পারলেদ্বকিক জীবনে পরিত্রাণ লাভ হবে।
‘উলূমুল হাদীছ’ গ্রন্থ রচনা করেছেন তা অত্যন্ত তথ্যবহুল ও পাণ্ডিত্যপূর্ণ। ইতোপূর্বে বাংলা ভাষায় এরূপ তথ্যবহুল কোনো গ্রন্থ রচিত হয়নি। গ্রন্থটি তেরোটি অধ্যায়ে সুবিন্যস্ত এবং প্রত্যেক অধ্যায়ের অধীনে উপস্থাপিত তথ্যাদি সুসংগঠিত ও সুসামঞ্ছস্যপূর্ণ। গ্রন্থটি সাধারণ বোদ্ধা পাঠক, শিক্ষার্থী ও প্রাগ্রসর গবেষকদের জন্য প্রভূত উপকারে আসবে এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বগুড়া জেলার কাহালু থানাধীন কচুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করার পর তিনি মাদরাসায় ভর্তি হন। তিনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল থেকে কামিল পর্যন্ত প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগসহ মেধাতালিকায় অনন্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ১৯৯০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে বি.এ. অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৯৯১ সালের এম.এ. পরীক্ষায়ও রেকর্ড পরিমাণ নম্বর পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। কলা অনুষদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তির স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি দু'টি স্বর্ণপদক ও দু'টি বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বৃত্তি লাভ করেন। ড. বেলাল ১৯৯৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। তিনি বর্তমানে এ বিভাগে প্রফেসর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি ভারতের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে কিছুদিন ভিজিটিং প্রফেসরের দায়িত্বও পালন করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬ বছর শিক্ষকতার জীবনে পাঠদান ও গবেষণার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সেমিনারেও যোগদান করেন। তিনি মিসর, সৌদি আরব, লেবানন ও ভারতসহ অনেক দেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। ইতোমধ্যে তাঁর প্রায় অর্ধ শতাধিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ দেশি-বিদেশি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর প্রকাশিত ও প্রকাশনাধীন গবেষণামূলক গ্রন্থের সংখ্যা ৩১টি। তন্মধ্যে আরবি ভাষায় লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭টি। ইতোমধ্যে আরবি ভাষায় মিসরের কায়রো ও লেবাননের বৈরুত থেকে তাঁর ৩টি গবেষণাধর্মী গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি তাফসীর বিষয়ে অভিসন্দর্ভ রচনা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি মিসরের বিশ্ববিখ্যাত আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে উসূলুদ দীন ফ্যাকাল্টিতে তুলনামূলক ধর্ম বিষয়ে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। তাঁর গবেষণার শিরোনাম ছিল ‘ইলমু মুকারানাতিল আদইয়ান: নাশআতুহু ওয়া তাতাওয়ারুহু ওয়া মুসাহামাতু ‘উলামায়িল মুসলিমীন ফীহি। তিনি অধ্যাপনার পাশাপাশি উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক মাস্টার্স থিসিস, এমফিল ও পিএইচডি গবেষণাকর্মের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং করছেন।