বাংলার আদি ইতিহাস অস্পষ্ট। বর্ধমান জেলার পাণ্ডুরাজার ঢিবি উৎখননের ফলে উদ্ঘাটিত তথ্যাবলি যদিও একটি প্রাক-আর্য সভ্যতার কথা আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় তবুও সমসাময়িক অধিবাসীদের রাজনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক জীবন সম্পর্কে অতি স্বল্প তথ্যই প্রকাশিত হয়েছে। বৈদিক সাহিত্যে পুঞ্জ, বঙ্গ, সুক্ষ এ ধরনের কয়েকটি নৃ-গোষ্ঠীর উল্লেখ ব্যতীত তাদের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে উক্ত সূত্র প্রকৃত কোন তথ্যই প্রদান করে না। গ্রিক ও লাতিন লেখকদের উল্লিখিত গঙ্গারিডে'র (Gangaridae) অস্তিত্ব এখনও কিংবদন্তী রূপেই রয়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগণা জেলায় অবস্থিত চন্দ্রকেতুগড় এবং ওয়ারী-বটেশ্বর নামক বাংলাদেশের ঢাকা জেলার নরসিংদি অঞ্চলের দুটি গ্রামে সাম্প্রতিককালে যে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন হয়েছে তার ফলাফল এবং এর পূর্বে বানগড় ও মহাস্থানগড়ে উৎখনন শুধু এই আভাসই প্রদান করে যে মৌর্যদের ইতিহাসের সাথে বাংলার ইতিহাসের সম্পর্ক ছিল অন্তত খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতাব্দী হতে। যদিও কোন কোন প্রত্নতত্ত্ববিদ এই অভিমত উপস্থাপন করেছেন যে ওয়ারী-বটেশ্বর- যা সূচনাতে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত ছিল- সম্ভবত মৌর্য সাম্রাজ্যের পূর্ব সীমানার শেষ প্রান্ত ছিল। এর বেশি কিছু এখন আমাদের অজানা। চন্দ্রকেতুগড়ে উৎখননের ফলে উদ্ঘাটিত ধ্বংসাবশেষের পাঁচটি বসতি যুগের ৩য় যুগকে প্রত্নতত্ত্ববিদগণ কুষাণদের বলে ধার্য করেছেন (খ্রিষ্টপূর্ব ১ম শতক-২য় খ্রিষ্টাব্দ), যার মধ্যে গ্রিক ও রোমানদের প্রভাবও রয়েছে। এর পরবর্তী দুই যুগকে যথাক্রমে গুপ্ত ও পালদের ওপর আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু এই ধার্যকরণ অতি স্বল্প বা অনুমানমূলক তথ্যের ওপর নির্ভর করেই করা হয়েছে। সুঙ্গদের (খ্রিষ্টপূর্ব ২য় শতক-খ্রিষ্টপূর্ব ১ম শতক) সাথে মহাস্থানগড়, বানগড় ও মুর্শিদাবাদ জেলার গীতগ্রামে প্রাপ্ত পোড়ামাটির মূর্তির সম্পর্ক রয়েছে বলেও অভিমত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ সবই অনুমান নির্ভর প্রস্তাব বলে মনে হয়।