শব্দের নিখুঁত বুননে পঙক্তিমালায় যদি সমাজসত্তার নিগুঢ় সত্য ভাসে, যদি সমাজমানসের বিমূঢ় আলেখ্যরূপ মূর্ততায় প্রতিভাসিত হয়, তবে এই মাল্য দিয়ে জীবনকে অনুভব করা যায়। এ কাব্যধারা আমার জীবনবোধের নির্যাস; এক দুর্দম এগিয়ে যাওয়া ব্যক্তিসত্তার হঠাৎ থমকে যাওয়া নদীর পথের বাঁকেবাঁকে জীবনসত্য খোঁজার অভিপ্রায়। এ জীবনসত্য খোঁজার প্রয়াসে নতুন নতুন রহস্য, উন্মোচিত তত্ত্ব,সত্য এই গ্রন্থের প্রতিটা কাব্যের পঙক্তিমালায় গ্রথিত হয়েছে। জীবনের নানা পরিক্রমায় উৎসারিত জীবনানুভূতি ও ভাবগুলো অক্ষরেঅক্ষরে, শব্দের বুননে সাকার হয়েছে এই কাব্যগ্রন্থে। কখনো মনে হবে, এই কাব্যগ্রন্থটি প্রকৃতির সাথে এক জৈব সত্তা ও সমাজ সমুদ্রে ভাসমান এক ক্ষুদ্র মানব সত্তার সম্পর্কের রসায়নে পুঞ্জীভূত ভাব ও অনুভূতির শিশিরবিন্দুর মত জমা বৈভব।কখনো মনে হবে, ভাবগুলো শব্দমাল্যকে হিমায়িত করেছে তুহিনসঞ্চয়নে। মানব সমাজ ও মানব মনের সংকটের ছবিটাই এখানে প্রতিভাসিত হয়েছে। আমিত্ব ও আমিত্বের সাথে সমাজের অনুষঙ্গসমূহের সহাবস্থানে কখনো বৈপরিত্ব,কখনো বিচ্ছিন্নতা,কখনো বিরুদ্ধতা, কখনো অন্যোন্যের এক মিশেল পরিক্রমার নির্যাস এই কাব্যগ্রন্থ। হয়ত আমার আত্মসত্তার সংকটে কেউকেউ নিজেদের খুঁজে পাবে, কারো হয়ত আমার মনের বাড়ির আঙিনাকে চেনাচেনা মনে হবে। এই মনে হওয়ার অপার স্বাধীনতায় আমিত্বের শৃঙ্খল ভেঙে যাবে, আত্মশ্লাঘার কাচের ঘর ভাঙ্গার মর্মর শব্দ শোনা যাবে। এই ভাঙ্গার গানের অনুকম্পায় সব সংস্কার আন্দোলিত হবে। এখানে প্রতিটা কাব্যের অবগাহনে সমাজ কাননের গহীন থেকে গহীনে গমন ঘটবে, মৃদুমন্দ বাতাসে বিশ্বাসের দ্রুমদলশোভিনীর দোল দেখে ভয় জাগবে, সংস্কার প্রত্যাশীর মনে জাগবে সংস্কারের ঢেউ, পথহারা পথিকের ত্রস্ত সৌষ্ঠবে জাগবে প্রেম। এই কাব্য আশাহত সত্তায় সাহস জাগাবে,পথ দেখাবে অন্বেষী পথিকে, জীবনবাস্তবতায় সংশয়াপন্ন চিত্তে জাগাবে প্রত্যয়। পাঠককে কেবল বোধের বিস্তারে ত্রিনয়নে খুঁজে নিতে হবে নিগুঢ় ভাবার্থ। এ গ্রন্থে চল্লিশটি কবিতার সন্নিবেশ ঘটেছে৷
এসব কবিতায় ব্যক্তি মানুষ, সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক জীবনের নানা সঙ্গতি, অসঙ্গতি, সংকট, জীবনবোধের বাস্তব ও আধ্যাত্মিক সত্যের নিগুঢ় অনুষঙ্গসমূহ প্রতিভাসিত হয়েছে৷