"বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সমীক্ষামালা - ৮: চারু ও কারু কলা " বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: “মানুষের ইতিহাসের প্রাচীনতম ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল লােকশিল্প।” বাংলার লােকায়ত শিল্পে প্রতিফলিত হয় শাসকবৃন্দের প্রভাব বলয়ের বাইরে বাংলার বৃহৎ জনগােষ্ঠীর মনন। এবং এ ধারার বিশেষ তাৎপর্য যে, এর বহমানতায় এদেশের নারীদের বিশেষ এবং বিশাল ভূমিকা আছে। এ শিল্পধারায় আমরা যেমন আবিষ্কার করি ইতিহাসে অনুল্লিখিত সাধারণ বাঙালির মৌলিকতা, তেমনি আবিষ্কার করি ইতিহাস দ্বারা আরাে অবহেলিত এবং প্রান্তিক অবস্থানে নারীদের অবদান ও অস্তিত্ব। পাণ্ডুরাজার ঢিবিতে আবিষ্কৃত শিল্পের আদিতম উপাদান সমূহের সাথে তাই আজকের গ্রামবাংলার মানুষের তৈরি লােকশিল্পের সাদৃশ্য চোখে পড়ে। গ্রামবাংলায় কালােত্তীর্ণ পােড়ামাটির মূর্তি আজও তৈরি হয়; আজও দেখা যায় পাণ্ডুরাজার ঢিবিতে প্রাপ্ত মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশের মতই পাখির ঠোটে সাপ, জালের মত দাগ কাটা নকশা, মাছ প্রভৃতি গ্রাম্য নকশি কাঁথায়, আলপনায় বা সখের হাড়ির আঁকের মাঝে রয়ে গেছে। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রভাব বাংলাদেশের শিল্পের রূপনিয়ামকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আবার বহু ধরনের বাহ্যিক সংস্কৃতির সাথে এদেশের সংস্কৃতির আদান-প্রদানের মাধ্যমে ধারণা, আঙ্গিক ও নন্দনতাত্ত্বিক চেতনার প্রবাহ পরিবর্তিত হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান গ্রন্থের উদ্দেশ্য এদেশের দৃশ্যশিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এবং পরিবর্তনের ধারা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ। সকল জাতির নিজস্ব ভৌগােলিক পটভূমির পরিপ্রেক্ষিতে মানানসই জীবনচর্যা গড়ে ওঠে, তাই পরিবেশ অবশ্যই সংস্কৃতির তথা শিল্পের প্রধান এবং প্রাথমিক নিয়ামক। এর সাথে যুক্ত হয় বাইরে থেকে আগত জনপ্রবাহ এবং বহির্বিশ্বের সাথে যােগাযােগ, যার ফলে আদান-প্রদান ঘটে বিচিত্র সংস্কৃতির । বাংলা এ উপমহাদেশের দক্ষিণ-পূর্বতম সীমানায় অবস্থিত এবং প্রাকৃতিক সীমারেখার কারণে তুলনামূলকভাবে দুর্গম ও বিচ্ছিন্ন। উত্তর ভারত থেকে আসা নতুন সংস্কৃতির ঢেউ বাংলাদেশে এসে পৌছানাের পথে মার্জিত হয়ে নিজের স্বকীয়তা খানিকটা হারিয়ে ফেলে। তবে একথাও ঠিক যে, প্রাচুর্যের কারণে যুগে যুগে এদেশ বিদেশীদের আকৃষ্ট করেছে। তাছাড়া প্রাচীনকাল থেকে এদেশের কৃষি, শিল্পজাত ও খনিজ উৎপাদনের সাথে চমকপ্রদ বস্ত্রশিল্প দেশ-বিদেশে রপ্তানি হতাে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে। প্রাচীন বাংলায় অষ্টম খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিক পর্যন্ত বণিক ও শিল্পীরা উচ্চ সামাজিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত ছিল।
Title
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সমীক্ষামালা - ৮: চারু ও কারু কলা