মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি, যিনি পরবর্তীতে সারা বিশ্বে মহাত্মা গান্ধি নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন, ১৮৬৯ সালের ২ অক্টোবর গুজরাটের পোরবন্দরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ভারতের একটি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে। তার শৈশব কেটেছিল ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সহিষ্ণুতার পরিবেশে। তিনি রাজকোটে স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং পরে ১৮৮৭ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে যান। লন্ডনে তিনি আইনবিদ্যা অধ্যয়ন করেন কিন্তু আইনজীবী হিসেবে সেরকমভাবে সফল হতে পারেননি।
১৮৯৩ সালে গান্ধি দক্ষিণ আফ্রিকায় আইনজীবী হিসেবে কাজ করার জন্য যান। সেখানে তিনি ভারতীয়দের প্রতি বৈষম্যের মুখোমুখি হন এবং তাদের অধিকারের জন্য লড়াই শুরু করেন। তিনি ১৯০৬ সালে সত্যাগ্রহ নামক অহিংস প্রতিরোধ আন্দোলনের সূচনা করেন। এই আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি ভারতীয়দের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আইন প্রত্যাহারের দাবি জানান। সত্যাগ্রহের সাফল্যের পর গান্ধিজি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেন এবং তাকে ভারতীয়দের নেতা হিসেবে দেখা হয়।
১৯১৫ সালে গান্ধি ভারতে ফিরে আসেন এবং দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ভ‚মিকা নেন। তিনি ১৯২০ সালে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন, যার লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ করা। এই আন্দোলন ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং যা ব্রিটিশ সরকারকে প্রায় হারের মুখোমুখি নিয়ে গিয়েছিল।
গান্ধিজি পরবর্তী বছরগুলোতে আরও অনেক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন, যেমন ধর্মঘট, লবণ সত্যাগ্রহ, এবং ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলন। তিনি সর্বদা অহিংসা ও সত্যাগ্রহের নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন এবং এই নীতিগুলো প্রচারের মাধ্যমে ভারতীয়দের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন। অবশেষে গান্ধিজিসহ ভারতের অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রচেষ্টায় ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে।
স্বাধীনতার পর গান্ধি দেশের অখণ্ডতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য কাজ করেন। তিনি ১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারি নাথুরাম গডসের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
এইভাবেই অবিরাম সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই সত্য, অহিংসা ও স্বাধীনতার পথচলায় পথিকৃত হয়ে উঠেছিলেন মহাত্মা গান্ধি। তিনি শুধু ভারতের মুক্তির সূর্য না, ছিলেন সারা বিশ্বের মানবতার আলোকবর্তিকা। আজও তার জীবনী আমাদের অশান্তিকর বিশ্বে শান্তি ও সহিষ্ণুতার বার্তা দেয়, সত্য ও ন্যায়ের জন্য লড়াই করার অনুপ্রেরণা জাগায়। চলুন, আমরা সকলেই গান্ধিজির আদর্শকে বুকে ধরে নতুন এক মানবিক বিশ্ব গড়ে তোলার প্রত্যয়ে আবদ্ধ হই।