সকল নাগরিকের সুশৃঙ্খল জীবনাযাপন, জীবন ও সম্পত্তি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, অপরাধ প্রতিরোধ, অপরাধীকে বিচারের জন্য উপস্থাপন ইত্যাদি প্রয়োজনে রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রাচীনতম পর্ব থেকেই দায়িত্বশীল রাজ-কর্মচারী নিয়োজিত ছিলেন। ক্রমবিবর্তনে নানা সংস্কার ও পরিকল্পনাবাহিত হোয়ে সেই ব্যবস্থাপনাই আধুনিককালের পুলিশ-প্রশাসনের রূপ পেয়েছে। বাংলাদেশের সুদীর্ঘ প্রায় আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে মূলত প্রহরীর ভূমিকায় পুলিশের যে সুবিন্যস্ত ও বিচিত্র কর্মোদ্যোগ, সফলতা-ব্যর্থতা তা নিয়ে বাংলা ভাষায় রচিত তেমন কোনো গ্রন্থ নেই বললেই চলে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে জনাব আহমেদ আমি চৌধুরী রচিত বাংলাদেশ : উত্তরাধিকার ও ব্যবস্থাপনা গ্রন্থটি একটি মল্যবান গবেষণাকর্ম হিসেবে স্বীকৃত পেতে পারে। ইতিহাসের বিভিন্নপর্বে পুলিশ প্রশাসনের সংক্ষিপ্ত রূপরেখা প্রণয়ন এবং অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিককালের পুলিশের বিভিন্নস্তরের পদস্থ কর্মকর্তাদের নামও কার্যকাল, স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশবাহিনীর শহীদ সদস্যদের তালিকা, পুরস্কারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পরিচয় ইত্যাদি তথ্য সংকলন করে গ্রন্থকার তাঁর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন। বাংলার সামগ্রিক ইতিহাসে পুলিশের ভূমিকা বা আনুসাঙ্গিক বিষয়ে ভবিষ্যত গবেষণার জন্য এই গ্রন্থটি অপরিহার্য সূত্র হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
আহমেদ আমিন চৌধুরী। ১৯৫০ খৃষ্টাব্দের ১৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার নোয়াজিশপুরে এক ঐতিহ্যবাহী বনেদী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা আবদুল হক চৌধুরী ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক। কোরেশী মাগন ছিলেন এ বংশের পূব পুরুষ। আহমেদ আমিনের ইতিহাস চর্চা পারিবারিক উত্তরাধিকার।
আহমেদ আমিন চৌধুরী পেশাগত জীবনে একন পুলিশ অফিসার। ১৯৭১ সনে ৪ জানুয়ারি তিনি ক্যাডেট সাব ইন্সপেক্টর হিসাবে পুলিশ বিভাগে যোগদান করেন। বৃহত্তর ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা ও গোপালগঞ্চ জেলার বিভিন্ন স্থানে তিনি দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও দেশের বাইরে মালয়েশিয়ায় পেশাগত উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং নামিবিয়ার স্বাধীনতা প্রক্রিয়ায় আনটাগ বাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেন।
জাতীয় বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তাঁর অনেক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং চট্টগ্রামী বাংলার শব্দ সম্ভাবর সুধী মহলে সমাদৃত হয়েছে। সম্প্রতি পুলিশ আইন সহায়িকা নামে আইন বিষয়ক আর একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ঢাকাস্থ এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ, বাংলা একাডেমী এবং ইতিহাস পরিষদ এর জীবন সদস্য ছাড়াও অনেক সামাজিক সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত। বর্তমানে কুমিল্লায় অতিরিক্ত পুলশ সুপার পদে কর্মরত আছে।
আহমেদ আমিন চৌধুরী ১৯৫০ সালের ১৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার নােয়াজিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ইতিহাস গবেষক (২০১১ সালে মরণােত্তর একুশে পদকপ্রাপ্ত) চট্টল তত্ত্ববিদ আব্দুল হক চৌধুরী তার পিতা ও মা জুবাইদা বানু চৌধুরী। ডিগ্রি। পাশ করে তিনি ১৯৭১ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর ক্যাডেট হিসেবে পুলিশ একাডেমি সারদায় যােগদান করেন। সেখানে প্রশিক্ষণকালীন ২৫ মার্চ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হলে তিনি সারদার অন্যান্য পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় প্রতিরােধ যােদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১২ এপ্রিল ১৯৭১ সালে রাতে তিনি ভারতের বহরমপুর শরণার্থী শিবিরে পৌঁছে। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। বৃহত্তর সিলেট জেলার বিভিন্ন স্থানে চাকরির সুবাদে সেখানকার ভাষা আত্মস্থ করেন। যার ফসল এ গ্রন্থটি। এছাড়াও তিনি ঢাকা জেলার বিভিন্ন স্থানে এবং ডিএমপির গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে অবসর। জীবনযাপন করছেন। এশিয়াটিক সােসাইটি, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ ইত্যাদির তিনি আজীবন সদস্য। তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে দীর্ঘদিন গােপালগঞ্জ ও কুমিল্লায় চাকরি করে বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করছেন।