পবিত্র কুরআন একটি জীবনবিধান। এটা কোনো নির্দিষ্ট এক বা একাধিক বিষয়ের ওপর লেখা গ্রন্থ নয়। অবশ্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হওয়ার কারণে এতে মানবজীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও সম্পৃক্ত সকল বিষয়েরই বর্ণনা, ইঙ্গিত বা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। কুরআনের মূল উপজীব্য মানুষ, এবং তার ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবন। কুরআনের তাফসির (ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ) এবং কুরআন নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে প্রচুর গ্রন্থ রয়েছে। এসব গ্রন্থে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বিজ্ঞান নিয়েও কমবেশি আলোচনা-পর্যালোচনা রয়েছে। কিন্তু কুরআন ও বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। যারা কুরআনের তাফসির করেছেন তারা বিজ্ঞানী বা বিজ্ঞান-বিশারদ নন, এমনকি তাদের প্রায় প্রত্যেকেই বিজ্ঞানের ধীমান পাঠকও নন। আর বিজ্ঞানীরা কুরআন-বিশারদ নন, সে কারণে তারা কুরআনের তাফসির করতে পারেন না বা সে চেষ্টাও করেন না, সেটাই স্বাভাবিক। বিজ্ঞান-বিষয়ক কুরআনের বর্ণনা নিয়ে প্রায়শ নানান বিতর্ক সৃষ্টি হয়। সে কারণে অনেক কুরআন-বিশারদ এবং ইসলামি চিন্তাবিদ তাদের আলোচনায় বিজ্ঞানের ওপর আলোকপাত করার চেষ্টা করেছেন। দুঃখের বিষয়, সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা বিজ্ঞানকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি, বা কুরআনের সঙ্গে বিজ্ঞানের প্রাসঙ্গিকতা বোধগম্য করে তুলতে পারেননি।
বাংলা ভাষায় কুরআন নিয়ে মৌলিক গ্রন্থ খুব কম; বেশির ভাগই অনুবাদ বা ডাইজেস্ট ধরনের। এতে ওপরোল্লিখিত সমস্যাগুলো ছাড়াও আরও একটা সমস্যা দেখা দেয়। সেটা হলো কুরআনের অনুবাদ ও পরিভাষাগত সমস্যা। এসব সমস্যা কাটিয়ে কুরআন ও বিজ্ঞানের আলোচনাকে গভীর, ঋদ্ধ, প্রাসঙ্গিক এবং বোধগম্য করে তোলার প্রয়াস বেশ দুর্বল ও কম। প্রফেসর ড. আহমেদ ইমতিয়াজের কুরআন ও বায়োলজি (দ্য বায়োলজিক্যাল মিরাকলস ইন দ্য কুরআন) গ্রন্থটি এই অভাব পূরণে একটি সফল প্রচেষ্টা।