বিশিষ্ট শিল্প সমালোচক অধ্যাপক নজরুল ইসলামের একই শিরোনামের প্রবন্ধ সংকলনের দ্বিতীয় সংস্করণ। ১৯৯৫ সনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী প্রকাশিত প্রথম সংস্করণে তাঁর ১৯৭২ থেকে ১৯৯৪ সময়ের মধ্যে লেখা ৩০টি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছিল। বর্তমান সংস্করণে ১৯৯৫-২০০৮ সনে প্রকাশিত অতিরিক্ত ২৫টি প্রবন্ধসহ মোট ৪৬টি প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের আধুনিক চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের বিভিন্ন বিষয় ও শিল্পীদের সম্পর্কে যেমন আলোচনা রয়েছে তেমনি রয়েছে বাংলাদেশের সমকালীন শিল্প ও শিল্পীদের নিয়ে পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনীর সমীক্ষা ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সংকলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পরিবেশ বিজ্ঞান ও নগর বিদ্যায় তাঁর পেশাগত অভিজ্ঞতার বেশ পরিচয় পাওয়া যায় বিষয় নির্বাচনে। প্রবন্ধগুলোতে লেখকের প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি ও বস্তুনিষ্ঠতা সুস্পষ্ট। গ্রন্থটির বিশেষ আকর্ষণ ১৬টি রঙিন প্লেট ও অসংখ্য সাদা-কালো ড্রইং। সমকালীন শিল্প ও শিল্পী বাংলাদেশের শিল্পকলা সাহিত্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম (১৯৪১) সমকালীন শিল্পকলার ওপর লিখছেন পাঁচ দশক। এ বিষয়ে তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা “অবনীন্দ্রনাথ-শিল্পী ও সাহিত্যিক”, ১৯৫৭ সনের ঢাকা কলেজ বার্ষিকীতে। ষাটের দশক থেকে ঢাকার বিভিন্ন প্রগতিশীল পত্র-পত্রিকায় শিল্পকলা বিষয়ে তাঁর বহু প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি নজরুল কাদির নামেও লিখতেন। তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী প্রকাশিত সমকালীন শিল্প ও শিল্পীর লেখক, ঈড়হঃবসঢ়ড়ৎধৎু অৎঃ রহ ইধহমষধফবংয ঝবৎরবং-এর গ্রন্থ তধরহঁষ অনবফরহ- ও অনফঁৎ জধুুধয়ঁব এর ভূমিকার লেখক এবং উভয় গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত শিল্পী জীবন-বৃত্তান্তের সংকলন। ঐধসরফুুঁধসধহ কযধহ : ঞযব ঝপষঢ়ঃড়ৎ ও জয়নুল আবেদিন : তাঁর কাজ ও কথা গ্রন্থেরও লেখক। তিনি শিল্পকলা একাডেমীর চারুকলা বিষয়ক প্রথম উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও চারুকলা ইনস্টিটিউটের খ-কালীন শিক্ষক ছিলেন। বিশ্বের বহু বিখ্যাত চিত্রশালা ও জাদুঘর দেখার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। নিজেরও আঁকার অভ্যাস আছে।
পেশাগত জীবনে নজরুর ইসলাম ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রফেসর ও প্রাক্তন সভাপতি। ১৯৬৩ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন, মাঝখানে (১৯৮২-৮৬) ব্যাংককস্থ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা বিষয়ে অধ্যাপনা করেছেন। ২০০৭ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান। তিনি নগর গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সাম্মানিক সভাপতি। তিনি ভূগোল ও নগরায়ণ বিষয়ে দেশে ও বিদেশে প্রকাশিত বেশ ক’টি গ্রন্থ ও শতাধিক গবেষণা প্রবন্ধের রচয়িতা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা (১৯৯১-৯৩), ইধহমষধফবংয টৎনধহ ঝঃঁফরবং ও নগরায়ণ সাময়িকীসমূহের সম্পাদক ছিলেন। তিনি ঈটঝ ইঁষষবঃরহ ড়হ টৎনধহরুধঃরড়হ ধহফ উবাবষড়ঢ়সবহঃ এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তিনি বাংলা একাডেমীর সম্মান সূচক ফেলো, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম সহসভাপতি ও বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির কার্যকরী সংসদের সদস্য।
বাংলাদেশের শিল্প সমালোচকদের মধ্যে নজরুল ইসলাম প্রথম সারির একজন। তিনি শিল্পের একনিষ্ঠ দর্শক, বোদ্ধা এবং শিল্প ইতিহাসের অম্বেষী পাঠক। বাংলাদেশের শিল্পকলার ইতিহাসটি তাঁর নখদর্পণে। নজরুল ইসলামের পড়াশোনার বিষয় ছিল ভূগোল, পরে সে বিষয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক হিসাবে তিনি বিশ্বের নানা দেশে গিয়েছেন, এবং সেসব দেশের বিভিন্ন গ্যালারি ও সংগ্রহশালা ঘুরেছেন। পশ্চিমের শিল্পকলা নিয়ে তাঁর প্রচুর আগ্রহ। কাজেই তাঁর পক্ষে শিল্পকলা নিয়ে লেখালেখিটা তাঁর অধিকারের মধ্যেই চলে আসে। এজন্য তিনি যেসব প্রবন্ধ লিখেছেন বাংলাদেশ ও বিশ্বের শিল্পকলা বিষয়ে, সেগুলিতে মৌলিক চিন্তা এবং নিজস্ব প্রচুর ব্যাখ্যা রয়েছে, পূর্বাপর প্রেক্ষিতে তাঁর বিষয়গুলি সাজানোর একটা প্রয়াস রয়েছে এবং সর্বোপরি, বস্তুনিষ্ঠভাবে শিল্পবিচারের একটা প্রবণতা রয়েছে। তাঁর অনেক মন্তব্য, ব্যাখ্যা অথবা বিশ্লেষণের সাথে হয়তো অনেকে একমত নাও হতে পারেন, কিন্তু তাঁর যুক্তিনিষ্ঠতা প্রশ্নাতীত। সমালোচনায় ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষিতে উন্মোচিত হয়, ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা সেখানে আসে এবং সমালোচক যদি মৌলিক হন থেকে পথক হবেই। তবে নজরুল ইসলামের লেখার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণে উৎসাহিত করেন। নজরুল ইসলাম এদেশের অগ্রগণ্য শিল্প সমালোচকদের অন্যতম। তাঁর দু’দশকের বিভিন্ন লেখার সংকলন বর্তমান গ্রন্থ।
সমকালীন শিল্প ও শিল্পী প্রথম সংস্করণের (১৯৯৫) ওপর শিল্প সমালোচকদের কিছু মন্তব্য “বাংলাদেশের শিল্পকলা আগ্রহী” পাক্ষিক শৈলী, (সম্পাদক : কায়সূল হক), ঢাকা ১ মে ১৯৯৭
“বর্তমান সমকালীন কাজ এবং বিশ্বের সমকালীন কাজের একটি ধারাবাহিক ইতিহাস তাঁর গ্রন্থটিতে স্পষ্ট। ধারাবাহিকতাকে বোঝাই একজন শিল্প সমালোচকের কাজ। শিল্প সমালোচক একজন শিল্পীই : তিনি শিল্প এবং শিল্পীর সমস্যা বুঝতে চান নিরন্তন এবং বোঝার মধ্য দিয়ে তিনি একজন শিল্পীর কাজকে শিল্পের ইতিহাস, শিল্পের ঐতিহ্য, মাধ্যমের ঐতিহ্য এবং নান্দনিকতার ঐতিহ্যের আলোকে দেখতে থাকেন। শিল্প সমালোচক হিসাবে নজরুলের গুরুত্ব এ ক্ষেত্রে।” - বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, জনকণ্ঠ, ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫।
শিক্ষা ও সাহিত্যের প্রতি প্রকৃত অনুরাগ এবং বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাধারার প্রতি যার প্রবল ঝোঁক। জন্ম ১৯৮০ সালের ২রা নভেম্বর; চাঁদপুর জেলার বৃহত্তর মতলব উপজেলায়। মা বেগম রোকেয়া আক্তার এবং বাবা আশেক উল্লাহ প্রধান। পড়ালেখা করেছেন, মতলব সূর্যমুখী কচি-কাঁচা প্রাথমিক বিদ্যালয়, মতলব জে.বি. সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, মতলব সরকারি ডিগ্রি কলেজ, চাঁদপুর সরকারি কলেজ, ঢাকা তেজগাঁও কলেজ, কুমিল্লা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ এবং চট্টগ্রাম সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে। তার পড়ালেখার ক্ষেত্র বৈচিত্র্যময়; রসায়ন, ইংরেজি সাহিত্য, শিক্ষণবিজ্ঞান, শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা। কিছুকাল উদ্ভিদবিজ্ঞান, আইন, বাংলা সাহিত্যও পড়েছেন। তিনি মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম, কথাসাহিত্য রচনা, পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা, সাংবাদিকতা, রিসার্চ মেথডলোজি বিষয়ে কোর্স ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। শিক্ষকতা করেছেন প্রায় এক যুগ—একটি ইংরেজি ভার্শন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সেখান থেকে উপাধ্যক্ষ হিসেবে শিক্ষকতার ইতি টানেন। তিনি নন-ফিকশনের পাশাপাশি ফিকশনেও সমান স্বচ্ছন্দ। বাংলা ও ইংরেজি জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য পাতায় নিয়মিত তার গল্প, বুক রিভিউ, অনুবাদ প্রকাশিত হয়। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ এডুকেশন থেকে এমফিল থিসিস করছেন। বৃশ্চিক রাশির জাতক এই লেখক পরিবার ও বন্ধু-পরিসরে ‘রাসেল’ নামে সমধিক পরিচিত। তিনি স্ত্রী তাহমিনা আক্তার ও দুই কন্যা প্রান্তি, প্রার্থনাকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন।