লক্ষ লক্ষ বছর ধরে প্রকৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পাখি তার ডিমের সুরক্ষা দিতে পেরেছে। কিন্তু নিজের সুরক্ষার কোন অস্ত্র তার নেই। তাই মনে হয় ওরাই আগে হারিয়ে যাবে। তখন?
তখন মানুষ পড়বে এক অস্তিত্বের সঙ্কটে। প্রাণিকুলের ওপর মানুষ যে আঘাত হানছে সে আঘাতের চিহ্নও সে মেরামত করতে পারবে না। পাখির মতই নিজের ধ্বংস প্রতিরুদ্ধ করার ব্যবস্থা তার নেই।
মানুষ নিজের সমুহ পতন রোধ করার ক্ষমতা রাখে না। আর এ ব্যবস্থা মানুষকেই করে নিতে হবে। সেজন্যেই প্রতিবেশী প্রাণিকুলের কথা তাকে বেশি করে ভাবতে হবে।
এইসব কঠিন কথা ছোটদের জন্যে গল্পে বলতে চেয়েছেন এক অবজ্ঞাত পক্ষীপ্রেমিক সরল গদ্যে। পাখিরা তাঁর গল্পের চরিত্র। তাদের অবোধ্য কাকলি তিনি ভাষান্তর করেছেন ছন্দোবদ্ধে। গল্পের মতই এর উত্থান-পতন-পরিণতি আছে যা বড়দের জন্যেও মজাদার। ছোটদের জন্যে এ ধরনের গল্প এখন খুব কম লেখা হয়। শিশুসাহিত্যে এ গল্পটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হতে পারে বলে আমাদের মনে হয়েছে।
শ্যামল ভট্রাচার্য শিশু আর পাখি ভালোবাসেন। তাঁর বাড়িতে বেশ কিছু পাখি আছে। কয়েকটি শিশু সংগঠনে তিনি কাজ করেন। একটি শিশু বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেছেন অন্যদের সহায়তায়। তিনি মনে করেন আমাদেরও শিশুরা যে প্রজম্মের পিতামাতার কাছে প্রতিপালিত হচ্ছে, সেই প্রজম্মটি আমূল পচে গেছে। তাই আগামী দিনের মানুষ সম্পর্কে তাঁর সমূহ আতঙ্ক আছে।
লেখক পরিচিতি
জম্ম ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ (২৫ শ্রাবণ, ১৩৪৬) বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলায় এক রাজনীতি-সচেতন পরিবারে। এগার জন ভাই বোনের মধ্যে অষ্টম। মা ও ভাই বোনেরা বামরাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁরা পাকিস্তান সরকারের হাতে নানাভাবে নিগৃহীত হয়েছেন। তিন ভাই দীর্ঘকাল কারারুদ্ধ ছিলেন। মেজভাই রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে গুলি খেয়ে একটা চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। ভাইবোনেরা ভাল ছাত্র ছিলেন কিন্তু কেউ সরকারী চাকরি পাননি। বেসরকারী চাকরি পেলেও বরখাস্ত করা হয়েছে।
শ্যামল ভট্রাচার্য স্কুল জীবনে ভাল ছাত্র ছিলেন। কলেজে পুরোপুরি রাজনীতিতে নিয়োজিত হন। পুলিশ তাঁর বাবাকে যচ্ছেতাই গালিগালাজ করে। তিনি তাঁকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেন। সেখানে তার পড়াশোনা বিশেষ হয়নি। পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা পাশ করে কোথাও চাকরি পাননি। অনেকদিন বেকারত্বের পর তাঁর বাল্যকালের স্কুল বগুড়া জেলা স্কুলের এককালের প্রধান শিক্ষক সেই সময়ের ডি.ডি.পি.আই.এ. কে. এম. আব্দুল আজিজ তাঁকে ঐ স্কুলের কারিগরি শিক্ষকের চাকরি দেন। সেখানে থেকেই চাকরি শেষ করেন ২০০০ সালে।
অভিনয় আর নাটক লেখা তাঁর পছন্দের বিষয়। নাট্যচর্চার ক্ষেত্রে তিনি স্বীকৃতি লাভ করেছেন। গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন পদক সহ অসংখ্য পদক পেয়েছেন। তাঁর রচিত দশটি নাটকের মধ্যে একটি মাত্র ছাপার আকৃতিতে আছে। কিছু নাটক ও নাট্য বিষয়ে প্রবন্ধ নানা পত্রিকায় ছড়িয়ে আছে। শ্যামাপাখি তাঁর একমাত্র গল্প।