প্রেম চিরন্তন। নারী পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে, পুরুষ নারীর প্রতি। আর এই আকর্ষণ কোনো দেশ বা কাল দিয়ে ঘিরে রাখা যাবে না। এজন্যেই নরনারীর প্রেম চিরন্তন ও সর্বজনীন। দেশহীন ও কালহীন। সর্বদেশে ও সর্বকালে পরিব্যাপ্ত। প্রেমের টানেই সম্রাট তাঁর সিংহাসন ও সাম্রাজ্য ছেড়ে ভেসে গেছেন - এ তো সেদিনের ঘটনা। নারী-পুরুষের প্রেমের এই লিখন চিত্রকলায়-স্থাপত্যে-ভাস্কর্যে-সাহিত্যে চিত্রিত-মুদ্রিত হয়ে আসছে চিরকাল। আবদুল মান্নান সৈয়দের কবিতায়-গদ্যে প্রেমের রূপায়ণ ইতোপূর্বেও ঘটেছে। কিন্তু হে বন্ধুর বন্ধু, হে প্রিয়তম-র মতো তীব্র নারীপ্রেমে উদ্বুদ্ধ আশ্চর্য-সুন্দর একক কোনো প্রেমের কবিতাগ্রন্থ এই প্রথম বেরিয়ে এল তাঁর হাত থেকে।
সব্যসাচী লেখক হিশেবে আবদুল মান্নান সৈয়দ বাংলাদেশে সুপরিচিত। তার পরেও তাঁর প্রধান পরিচয় কবি হিশেবেই। ‘কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ’ এই নামেই এক-ডাকে তাঁকে চেনেন সবাই। যদিও এর বাইরেও তাঁর কর্মক্ষেত্র ব্যাপক-বিশাল। চার দশক আগে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কবিতাগ্রন্থ জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ হইচই ফেলে দিয়েছিল আমাদের সাহিত্যজগতে। তারপর তাঁর অনেক কবিতার বই বেরিয়েছে। কিন্তু কখনোই পুনরাবৃত্তি তিনি করেন না। তাঁর অতিসাম্প্রতিক কবিতাগুচ্ছের সংকলন এই তাঁর নতুনতম কবিতাগ্রন্থটি হে বন্ধুর বন্ধু, হে প্রিয়তম। প্রেমের এক আশ্চর্য অনুভূতি-অভিজ্ঞতায় আন্দোলিত এই বইএর কবিতাগুলিতে তিনি এক নতুন পৃথিবীতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এই বইএর কবিতাগুলি বয়ে নিয়ে এসেছে এক অভাবিত আশ্চর্য অপরূপ সুস্বাদ।
আবদুল মান্নান সৈয়দ (৩ আগস্ট ১৯৪৩ - ৫ সেপ্টেম্বর ২০১০) বাংলাদেশের একজন আধুনিক কবি, সাহিত্যিক, গবেষক ও সাহিত্য-সম্পাদক। তিনি ২০০২ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের "পোয়েট ইন রেসিডেন্স" ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর ষাট দশক থেকে বাংলা সমালোচনা-সাহিত্যে তার গবেষণাধর্মী অবদান ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। কাজী নজরুল ইসলাম ও জীবনানন্দ দাশের উপর তার উল্লেখযোগ্য গবেষণা কর্ম রয়েছে। তিনি ফররুখ আহমদ, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিষ্ণু দে, সমর সেন, বেগম রোকেয়া, আবদুল গনি হাজারী, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, প্রবোধচন্দ্র সেন প্রমুখ কবি-সাহিত্যিক-সম্পাদককে নিয়ে গবেষণা করেছেন। বাংলাদেশের সাহিত্যমহলে তিনি 'মান্নান সৈয়দ' নামেই পরিচিত ছিলেন।