মাত্র একটি সুদীর্ঘ কবিতা নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি গ্রন্থের কলেবর। আমাদের কাব্য সাহিত্যের ইতিহাসে এটি একটি অভিনব গ্রন্থ হিসেবে এরই মধ্যে স্বীকৃতি অর্জন করে ফেলেছে। একটি প্রবীণ বটবৃক্ষকে গ্রন্থের কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করা হয়েছে। আসলে প্রবীণ বৃক্ষটি বাঙালি জীবনের প্রতীক। এই বট বৃক্ষের কাহিনীতে বাঙালির সম্মিলিত জীবন প্রবাহের অপরূপ কাহিনী ছন্দ ঝংকারে ঝংকৃত হয়ে উঠেছে। বাঙালির ইতিহাস, বাঙালির ঐতিহ্য এবং জীবন সংগ্রামের মর্মমধু নিয়ে এই কাব্যগ্রন্থ নতুন একটি ব্যঞ্জনায় ব্যঞ্জিত হয়ে উঠেছে। একটি সংগ্রামশীল জনগোষ্ঠীর সক্রিয় প্রতিনিধি হিসেবে কবির যে গভীর আত্মানুসন্ধান প্রয়াস তার তাৎপর্য অপরিসীম। কাব্যগ্রন্থটির শরীরে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার ছাপ অবশ্যই পরিদৃশ্যমান। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে কাব্য সাফল্যের যে পরিচয় গ্রন্থটি তুলে ধরতে পেরেছে, তার তুলনা অধিক খুঁজে পাওয়া যাবে না। এটি এমন এক অনন্য গ্রন্থ যা পাঠ করে অনেকদিন পর্যন্ত গৌড়জন আনন্দে করিবে পান সুধা নিরবধি।
লেখক পরিচিতি
আহমদ ছফার জন্ম ১৯৪৩ সালে,চট্টগ্রামের গাছবাড়িয়া গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেছেন। তারপর কয়েক বছর তিনি প্রথমে বাংলা একাডেমী এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় মনোনিবেশ করেন।
আহমদ ছফা উপন্যাস, ছোটগল্প, ইতিহাস এবং সাহিত্য-সমাজ বিষয়ক রচনা এবং শিশুতোষ গ্রন্থ মিলিয়ে প্রায় ত্রিশটির মতো গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর সব ধরনের রচনায় মননশীলতা এবং বিশ্লেষণী ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যায়। জার্মান মহাকবি ভোলফগাঙ ফন গ্যয়টের অমর মহাকাব্য ফাউস্টের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করে তিনি অনন্য কীর্তির অধিকারী হয়েছেন।
আহমদ ছফা বাংলাদেশ লেখক শিবিরের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ‘উত্থানপর্ব’ নামাঙ্কিত একটি সাহিত্য সাময়িকী সম্পাদনা করছেন।
বাঙালি মুসলিম লেখকদের মধ্যে অন্যতম কীর্তিমান কথাসাহিত্যিক আহমদ ছফা একাধারে ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক, গণবুদ্ধিজীবী ও চিন্তাবিদ। বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান আহমদ ছফা জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৩ সালের ৩০ জুন, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার গাছবাড়িয়া গ্রামে। নিজ এলাকায় তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়, এবং ১৯৫৭ সালে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত হন এবং মাস্টারদা সূর্যসেনের আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হলেও সেখানে পড়ালেখা শেষ করেননি, এবং জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের অধীনে পিএইচডি শুরু করলেও তা আর শেষ করা হয়ে ওঠেনি। আহমদ ছফা এর বই সমূহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পাঠকদের মধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বই হিসেবে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা প্রবন্ধগ্রন্থ ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’। আহমদ ছফা এর বই সমূহের মাঝে 'ওঙ্কার', 'অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী', 'বাঙালি মুসলমানের মন', যদ্যপি আমার গুরু', 'গাভী বিত্তান্ত' প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তাঁর আরেকটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি হলো জার্মান সাহিত্যিক গ্যাটের অমর সাহিত্যকর্ম 'ফাউস্ট' বাংলায় অনুবাদ করা। আহমদ ছফা এর বই সমগ্র একত্রিত করে রচনাবলি আকারে ৯টি খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানবিরোধী এই সাহিত্যিক 'লেখক শিবির পুরস্কার' ও বাংলা একাডেমির ‘সাদত আলী আখন্দ পুরস্কার’ পেলেও সেগুলো গ্রহণ করেননি। এই পাঠকনন্দিত সাহিত্যিক ২০০১ সালের ২৮ জুলাই ৫৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ২০০২ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মরণোত্তর 'একুশে পদকে' ভূষিত হন।