"বাংলাদেশের ইতিহাস ১৭০৪ - ১৯৭১ (৩ খণ্ড একত্রে)"বইটির ১ম ফ্লাপের কিছু কথা: তিন খণ্ডের এ গ্রন্থ এমনভাবে পরিকল্পিত ও বিন্যস্ত হয়েছে যেন নবাবি শাসনের প্রারম্ভ থেকে বাংলাদেশ বিপ্লবের প্রাক্কাল পর্যন্ত এদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবনের বিকাশধারা সম্পর্কে মােটামুটি একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায়। মােট ষাটটি অধ্যায় সম্বলিত এ গ্রন্থ বিন্যস্ত হয়েছে বিষয়ভিত্তিকভাবেযেমন প্রথম খণ্ডের বিষয় রাজনৈতিক, দ্বিতীয় খন্ডের বিষয় অর্থনৈতিক এবং তৃতীয় খণ্ডের বিষয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক। এটি প্রণয়নে অবদান রেখেছেন দেশবিদেশের সাতচল্লিশজন প্রখ্যাত পণ্ডিত। ভূমিকাসহ প্রত্যেক খণ্ডে রয়েছে বিশটি অধ্যায় এবং প্রতিটি অধ্যায় রচিত হয়েছে সে বিষয়ের একজন বিশেষজ্ঞ কর্তক। গ্রন্থের প্রতিটি অধ্যায়ই তথ্যসমৃদ্ধ, বিশ্লেষণধর্মী, বস্তুনিষ্ঠ; প্রতিটি অধ্যায়য়েই ব্যাখ্যাবিশ্লেষণের পাশাপাশি উত্থাপিত হয়েছে প্রাসঙ্গিক নতুন প্রশ্ন, দেখানাে হয়েছে আরও গবেষণার সম্ভাব্য দিক। আমাদের আলােচ্য সময়ে উত্থান-পতন ঘটেছে। তিন তিনটি ভিন্নধর্মী রাষ্ট্রের, যথা নবাবি, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক এবং পাকিস্তানি রাষ্ট্র। বােধগম্য কারণেই, বাঙালি সমাজ-সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতি তথা বাঙালি জাতি ও জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ও অগ্রযাত্রা ঘটেছে কোনাে সংক্ষিপ্ত সরলরেখায় নয়, বরং দীর্ঘ এক বক্ররেখা ধরে। এ বক্ররেখার আঁকেবাকে রয়েছে রাজা-মহারাজা, বানিয়া-মুৎসুদ্দি, জমিদার, মধ্যস্বত্বভােগী, প্রশাসনিক বাবুশ্রেণী, হিন্দুভদ্রলােক, মুসলিম
বাংলাদেশের সমকালীন নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক অসঙ্গতি ও অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে সদা সোচ্চার প্রখ্যাত অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী একইসাথে একজন লেখক, সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক। কার্ল মার্ক্সের দর্শনে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন তিনি, এবং একজন প্রগতিশীল ও মুক্তমনা ব্যক্তি হিসেবে তিনি সমাজে আত্মপ্রকাশ করেন। সমাজে ঘটে যাওয়া দুর্নীতিসহ নানা অসঙ্গতি, মানুষের অধিকার ও বাকস্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয়ে তিনি আজীবন লেখালেখি করে গিয়েছেন ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে আন্দোলনে একজন পুরোধা হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিখ্যাত এই সমাজ সংস্কারক জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৬ সালের ২৩ জুন। বাবার চাকরিসূত্রে তাঁর শৈশবকাল অতিবাহিত হয় রাজশাহী ও কলকাতায়। তবে তাঁর শিক্ষাজীবনের বেশিরভাগই অতিবাহিত হয় ঢাকায়। ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যে ভর্তি হন এবং এখান থেকেই স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে উচ্চতর শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যের লীডস ও লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং সেখানে ইংরেজি সাহিত্যের উপর গবেষণা করেন। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা শুরু করেন। অবসর গ্রহণের পর থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপকের পদ অলংকৃত করছেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি লেখালেখি চালিয়ে গিয়েছেন নিয়মিত। ‘গাছপাথর’ ছদ্মনাম ব্যবহার করে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় সমকালীন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখে তিনি খ্যাতি পেয়েছেন। ‘নতুন দিগন্ত’ নামক একটি সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ও এর সম্পাদনার সাথে এখনো যুক্ত আছেন। এছাড়াও বেশ কিছু পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন তিনি। আর পত্রিকায় লেখালেখির পাশাপাশি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বই প্রকাশিত হয়েছে অসংখ্য। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এর বই সমূহ এর মধ্যে রয়েছে অসংখ্য প্রবন্ধগ্রন্থ ও বেশ কিছু উপন্যাস, ছোটগল্প এবং অনুবাদ গ্রন্থ। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এর বই সমগ্র এর মধ্যে ‘শেষ নেই’, ‘কণার অনিশ্চিত যাত্রা’ ইত্যাদি উপন্যাস, ‘ইবসেনের বুনো হাঁস’, ‘এরিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব’, ‘হোমারের অডিসি’ ইত্যাদি অনুবাদগ্রন্থ, ‘বাঙালীর জাতীয়তাবাদ’, ‘দ্বিতীয় ভুবন’, ‘শেষ মীমাংসার আগে’, ‘ধ্রুপদী নায়িকাদের কয়েকজন’, ‘শেক্সপীয়রের মেয়েরা’ ইত্যাদি প্রবন্ধগ্রন্থ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’, ‘একুশে পদক’ ইত্যাদি সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।