এটি ইসলামের সামাজিক বিধি-বিধানের ব্যাখ্যা-প্রায়োগীক বিশ্লেষণ ও প্রশ্নোত্তর সংবলিত একটি অনবদ্ধ গবেষণাভিত্তিক গ্রন্থ। যারা ইসলামকে জানা ও বুঝার জন্য সমাধান চান অথবা যারা শত্রুতা পোষণে ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য নানা ত্রুটিবিচ্যুতি অনুসন্ধান করে-এতে উভয়দলের জন্যই রয়েছে দিকনির্দেশনামূলক সমস্যা সংক্রান্ত জবাব। এতে ইসলামের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় দিক সংবলিত নানা বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে- যে কোনো পাঠক তা থেকে উপকৃত হবেন এমনটাই আশা করা যায়। যদি বলা যায় মহান আল্লাহ মানুষের জন্য যে বিধান নাযিল করেছেন তা জানার- বুঝার উপায় কী? প্রথম উপায় হচ্ছে আল্লাহ্র কিতাব আল-কুরআন, দ্বিতীয় হচ্ছে সুন্নাতে রাসূল এবং তৃতীয় হচ্ছে ইজতিহাদ। আবার এ ইজতিহাদ কয়েক প্রকারের। যেমন- ইজমা, কিয়াস, ইস্তিসলাহ আলমুসলিহাতুল মুরসালা। আর ইসলামের বিধি-বিধান সম্পর্কে ধারণা নেয়া যায় এভাবে যে, তা কোনো মানুষের মনগড়া কথা নয়, তা হচ্ছে মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল-এর দিকনির্দেশনা। আর এটাই হচ্ছে ইসলামী শরীয়তের পূর্ণাঙ্গতা। মানুষের কল্যাণে যেসব বিধি-বিধান কুরআনে এবং রাসূল-এর হাদীসে আলোচিত হয়েছে তাই হচ্ছে শরীয়ত, এর বাইরে দ্বীনের নামে যা আছে তা অগ্রহণযোগ্য। গ্রন্থটি এসব সারগর্ভ আলোচনারই অংশবিশেষ।
প্রফেসর ড. জামাল আল বাদাবী সমকালীন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামি চিন্তাবিদ। তিনি হলেন একজন মিশরীয় বংশোদ্ভূত কানাডীয় মুসলিম। কানাডার নোভা স্কটিয়ার হ্যালিফ্যাক্সের সোবি স্কুল অফ বিজনেস, সেন্ট মেরিস বিশ্ববিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব বিষয়ের ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই ইসলামি চিন্তাবিদ ধর্মীয় অধ্যয়ন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে অধ্যাপনা ছাড়াও একজন সুপরিচিত লেখক, সক্রিয় কর্মী, প্রচারক এবং ইসলামি বক্তা। ড. বাদাভি মিশরের কায়রোতে স্নাতক অধ্যয়ন এবং ইন্ডিয়ানার ব্লুমিংটনের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। জামাল বাদাভি উত্তর আমেরিকায় বক্তৃতা, আলোচনা এবং আন্তঃধর্ম সংলাপে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। সারা বিশ্বে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি বক্তা হিসেবে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। উপরন্তু, তিনি ইসলামিক সোসাইটি অফ নর্থ আমেরিকা (আইএসএনএ) সহ বেশ কয়েকটি ইসলামিক সংগঠনেরও সক্রিয়। তিনি ইসলামিক ইনফরমেশন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা, যা ইসলাম এবং মুসলমানদের সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য একটি অলাভজনক ফাউন্ডেশন। বর্তমানে বাদাভি ৫জন সন্তানের পিতা এবং ১২জন সন্তানের পিতামহ। মিসরে জন্মগ্রহণকারী এই মনীষী তরুণ বয়স থেকেই ইসলামি আন্দোলনের মূলধারার সাথে যুক্ত। ইসলাম সম্পর্কে পাশ্চাত্যের নাগরিকদের নানামুখী প্রশ্নের সহজ-সরল জবাব প্রদানে জামাল বাদাবী'র পারদর্শিতা অনেক অমুসলিমকেও মুগ্ধ করে। যার ফলশ্রুতিতে তাঁর হাত ধরে বিপুল সংখ্যক অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর মনোজ্ঞ উপস্থাপনায় জটিল ফিক্হী বিষয়ও সাধারণের কাছে বোধগম্য হয়ে উঠে। ইসলাম ধর্মের কালোত্তীর্ণ, বিশ্বজনীন ও মানবিক আবেদন তাঁর কথা ও লেখনীতে উঠে আসে। আধুনিক বিজ্ঞান মনষ্ক মানুষ তাঁর জবানীতে পায় যুগ জিজ্ঞাসার সুন্দরতম সমাধান। প্রফেসর ড. জামাল আল বাদাবী তাঁর দি মুসলিম উইমেন ড্রেস পুস্তিকাটি মূলত মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন আল-আলবানীর আরবি ভাষায় রচিত গ্রন্থ হিজাবুল মারাতিল-মুসলিমাহ ফিল কিতাব ওয়াস্সুন্নাহর উপর ভিত্তি করে ইংরেজি ভাষায় প্রণয়ন করেন। পুস্তিকাটি বাংলায় “মুসলিম নারী-পুরুষের পোশাক” শিরোনামে অনুবাদ ও প্রকাশের ব্যবস্থা করে। ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলিম নারী ও পুরুষের পোশাক কী হবে এ নিয়ে সাম্প্রতিককালে মুসলমানদের মাঝে এক ধরনের বিতর্ক ও আলোচনা চলছে। প্রফেসর ড. জামাল আল বাদাবী এ প্রেক্ষাপটে সমস্যাটি নিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে অত্যন্ত মূল্যবান আলোচনার প্রয়াস পেয়েছেন। এ আলোচনার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে পোশাক সম্পর্কিত আল্লাহর সে সব বিধি- নিষেধ যা কুরআনে বর্ণিত হয়েছে এবং যা তাঁর মনোনীত বাণী বাহক নবি মুহাম্মাদ সা. ব্যাখ্যা করেছেন। “ইসলামে পোশাকের বিধান”পাঠে পোশাক পরিচ্ছদের বিধান সম্পর্কে ধারণা বহুলাংশে সুস্পষ্ট হবে এবং এ সম্পর্কিত প্রচলিত ভুল ধারণার অবসান ঘটবে।