২৫ মার্চের রাতে যখন মহল্লায় মহল্লায় যুবকরা জোনাকির সাথে শব্দ ও আলোর খেলায় মেতে ওঠে, তখন সেই যুবতীর হয়তো শখ হয়েছিল আলোকের ঝরনাধারায় স্নান করার, ফলে সে হয়তো তার বাবাকে বলেছিল, 'বাবা দেখেছ! আলোকের এই ঝরনাধারা জীবনে কখনো দেখেছ? চল বাবা, ম্লান করি।' তারপর যুবতীটি যখন সত্য সত্যই পথে বেরিয়ে আসে এবং যুবকদের দলে যোগ দেয়, তারপর যখন মিলিটারি আসে এবং তাদের মধ্যে জেনারেল টিক্কা খানের হুকুম শোনা আরেক ক্যাপ্টেন থাকে, যে কি না তার চোখের সামনে টিক্কা খানের গুলিতে তার সহকর্মীর মৃত্যু দেখেও নির্বিকার ছিল, সেই তরুণ ক্যাপ্টেন তখন বাঙালি যুবক ও যুবতীর দিকে তাকিয়ে মার্কিন সেনাদের মতো 'ফাক আপ! ফাক আপ' বলে। অথবা সে হয়তো খাঁটি উর্দুতে 'খতম কর দো, মিষ্টিমে মিশাই দো গাদ্দারকো' বলে এবং তা শুনে তার সঙ্গে থাকা সৈনিকদের দল ঠা ঠা শব্দে গুলি করে, আর সেই গুলির ঝরনাতে হয়তো আলোকের ঝরনাধারা নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন যুবকদের সাথে যুবতীও লাশ হয়ে ওঠে এবং আকাশের দিকে তুলে ধরা তার মেহেদিরাঙা হাত সেভাবেই লম্বা হয়ে পড়ে থাকে টানা ৩৬ ঘণ্টা। তারপর ২৭ মার্চে যখন শত শত ট্রাক আসে শহরের বুকে পড়ে থাকা লাশগুলোকে তুলে নিতে, তখন তারা যুবতীর শক্ত হয়ে যাওয়া সেই হাতকে বাঁকাতে পারে না, ফলে যখন তা ট্রাকে তোলা হয়, তখন তার হাত ত্রিপল ভেদ করে বাইরে চলে আসে। জিঞ্জিরার পথে যেতে যেতে তমিজ সেই হাতটিকেই দেখে।