আদব-১: কারো সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে এত বেশি সময় বসতে বা কথা বলতে নেই যে, তিনি অধৈর্য হয়ে পড়েন অথবা তার কাজের ক্ষতি হয়।
আদব-২: কারো সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে যদি দেখা যায় সে ব্যক্তি
কোনো কাজে মশগুল, যেমন কুরআন তেলওয়াত করছে কিংবা ওযীফা আদায় করছে বা নির্জনে বসে লিখছে বা ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইত্যাদি, তাহলে সালাম কালাম না করেই সোজা চলে আসা চাই। তবে কথা বলার তীব্র প্রয়োজন হলে, প্রথমেই তাকে বলতে হবে, আপনার সাথে কিছু কথা আছে। অনুমতি নেওয়ার পর কথা বলতে কোনো অসুবিদা নেই। অন্যথায় তিনি যখন অবসর হবেন, তখন সাক্ষাৎ করতে হবে।
আদব-৩: কারো সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে প্রথমেই সালাম কালাম
বা তার সম্মুখে বসে বা অন্য যে কোনো উপায়ে নিজের উপস্থিতি সম্পর্কে তাকে অবগত করা উচিত। অবগত করা ব্যতীত বসতে নেই। কারণ, হতে পারে তিনি এমন আলোচনা করবেন যা তোমাকে শোনাতে তিনি রাজি নন। আর অন্যের গোপন কথা জেনে ফেলা মারাত্মক অপরাধ। তুমি নেই ভেবে আলোচনা শুরু হয়ে গেলে, সাথে সাথে সেখান থেকে সরে যাওয়া উচিত। কিংবা ঘুমন্ত মনে করে আলোচনা শুরু হলে তোমার জাগ্রত অবস্থা প্রকাশ করে দেবে। তবে তোমার বা কোনো মুসলমানের ব্যাপারে ষড়যন্ত্র করলে আলোচনা ভালোভাবে শুনা উচিত। যেন প্রয়োজনের সময় আত্মরক্ষা করা যায়।
হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং এর গন্ডি পেরিয়ে যিনি হাজারো মানুষকে দিয়েছেন আত্মশুদ্ধি ও তাসাওউফ এর শিক্ষা। যার কারণে তাঁর উপাধি ছিলো ‘হাকীমুল উম্মাত’ বা উম্মাহর আত্মিক চিকিৎসক। উপমহাদেশে মুসলমানদের মাঝে সুন্নতের জ্ঞান প্রচারে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ‘দাওয়াতুল হক’ এর অবদানের জন্যও প্রসিদ্ধ মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর নাম। মাওলানা আশরাফ আলী থানভী ১৯ আগস্ট, ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে (রবিউস সানী ৫, ১২৮০ হিজরী) ভারতের উত্তর প্রদেশের থানাভবনে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই হাফেয হোসাইন আলী রাহ.-এর কাছে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাঁর শিক্ষাজীবন। নিজগ্রামেই ছোটবেলায় হযরত মাওলানা ফতেহ মুহাম্মদ থানভী রাহ.-এর কাছ থেকে আরবি ও ফার্সি ভাষার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১২৯৫ হিজরীতে তিনি দারূল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের উচ্চতর শাখাগুলোয় বিচরণ করার আগ্রহে। সেখানে তিনি পাঁচ বছর হাদীস, তাফসীর, আরবি সাহিত্য, ইসলামী দর্শন, যুক্তিবিজ্ঞান, ইসলামি আইন এবং ইতিহাস বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। দেওবন্দে শিক্ষার অধ্যায় সমাপ্ত করে মক্কা মুকাররমায় মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কীর কাছে কেরাত ও তাজবীদ শেখেন। তিনি কানপুরের একটি মাদ্রাসায় মাত্র ২৫ টাকা বেতনে শিক্ষকের পদ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে কানপুরের টপকাপুরে জামিউল উলূম মাদ্রাসার প্রধান পরিচালকের আসন অলংকৃত করেন এবং দীর্ঘ ১৪ বছর সেখানে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে তাঁর শিক্ষক হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কীর রহ. পরামর্শে তিনি থানা ভবনের খানকাহে ইমদাদিয়ায় অবস্থান গ্রহণ করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। সারা জীবনে আশরাফ আলী থানভী এর সকল বই এর হিসেব করতে গেলে ছোট-বড় মিলিয়ে তা সাড়ে বারো হাজার ছাড়িয়ে যায়। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমূহ এর মধ্যে ফিকাহ বিষয়ক বই ‘বেহেশতী জেওর’ উপমহাদেশের মুসলমানদের মাঝে বহুল পঠিত। এছাড়া তাঁর রচিত কুরআন শরীফের উর্দু তরজমার গ্রন্থ বয়ানুল কুরআনও (কুরআনের ব্যাখ্যা) এর ভাষা ও ব্যখ্যাশৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমগ্র এর স্বত্ত্ব তিনি জাতির কল্যাণে উন্মুক্ত করে রেখে গেছেন। জুলাই ১৯, ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে (১৬ রজব, ১৩৬২ হিজরী) আল্লামা থানভী রহ. তাঁর জন্মস্থান থানা ভবনেই মৃত্যুবরণ করেন।