মাম গাযযালী (রহ.) উপদেশবাণী
হে প্রিয় বৎস!! মনোযোগে দিয়ে শোন, আল্লাহ তার আনুগত্যে তোমাকে দীর্ঘ জীবন দান করুন, তোমাকে তাঁর প্রিয়জনদের পথে চলার তাওফিক দান করুন। সর্বপ্রকার নসীহত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রেসালাতের উৎস (কোরআন ও হাদীস) থেকেই আহহৃত। কোরআন ও হাদীসের উপদেশবাণী যদি তোমার কাছে পৌঁছে থাকে আমার উপদেশ তোমার কী প্রয়োজন! আর কোরআন ও হাদীসের উপদেশসমূহ তোমার কাছে না পৌঁছে থাকে! তাহলে বলো, এতো বছর তুমি অর্জন কী করেছ!
হে বৎস!!
কয়েকটি হাদীসের সারাংশ থেকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে যে উপদেশ দিয়েছেন তা লাভ করা যায়-
عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : عَلَامَةُ إِعْرَاضِ اللَّهِ تَعَالَى عَنْ عَبْدِهِ اشْتِغَالُهُ بِمَا لَا يَعْنِيْهِ وَإِنْ امْرَأَ ذَهَبَتْ سَاعَةٌ مِنْ عُمْرِهِ فِي غَيْرِ مَا خُلِقَ لَجَدِيرٌ أَنْ تَطُولَ حَسْرَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ جَاوَزَ الْأَرْبَعِينَ وَلَمْ يَغْلِبُ خَيْرُهُ عَلَى
شَرِّهِ فَلْيَتَجَهَّرْ إِلَى النَّارِ مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيْهِ.
অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ
কোন বান্দাকে উপেক্ষা করার নিদর্শন এটাই যে, সে অনর্থক কাজে লিপ্ত
হবে। আল্লাহ যে কাজের জন্য তাঁর বান্দাকে সৃষ্টি করেনি, সে কাজে বান্দা জীবনের কোন সময় ব্যয় করে, এটা কেয়ামতের দিন তার দীর্ঘ অনুশোচনার জন্য যথেষ্ট। ৪০ বছর অতিক্রম করা সত্ত্বেও যার নেকআমল বদআমলের তুলনায় বেশি হয়নি সে যেন জাহান্নামের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। সর্বোত্তম মুসলমান ঐ ব্যক্তি যে অনুচিত কাজ পরিহার করে।'
সুতরাং জ্ঞানীদের উপদেশ গ্রহণের জন্য এ কয়টি নসীহতই যথেষ্ট।
হে বৎস!!
উপদেশ দেওয়া সহজ কিন্তু উপদেশ গ্রহণ করা কঠিন। কেননা উপদেশ প্রবৃত্তির চাহিদার বিপরীত হয় তাহলে তা তিক্ত লাগে। নিষিদ্ধ বিষয় তাদের নিকট প্রিয় হওয়ার কারণে। বিশেষ করে যারা ইলম অর্জনে করে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রশংসা লাভের উদ্দেশ্যে তাদের জন্য। কেননা তার ধারণা, ইলম অর্জনই মুক্তিলাভের উপায় হবে। আমল তার জন্য অনাবশ্যক। অথচ এটা দার্শনিকদের ধারণাবিশ্বাস।
বড়ই আশ্চর্যের বিষয়! তার জানা নেই যে, ইলম অনুযায়ী আমল না করলে ইলম তার বিপক্ষে শক্ত দলীল হবে। যেমনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ قَالَ : إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَالِمٌ لَمْ يَنْفَعُهُ اللَّهُ بِعِلْمِهِ.
অর্থাৎ, নিশ্চয় কেয়ামতের দিন সর্বাধিক কঠিন আযাব ঐ আলেমের হবে যাকে আল্লাহ তার ইলম দ্বারা উপকৃত করেননি।
এক ব্যক্তি জুনায়েদ বাগদাদীকে (রহ.) তাঁর মৃত্যুর পর স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করলো, হে আবুল কাসেম! আপনার কী অবস্থা? তিনি বলেন, আমার মুখস্থ ও উপলব্ধির সকল ইলম অকেজো হয়েছে। গভীর রাতে যে কয় রাকআত নামাজ পড়তাম সেগুলোই উপকারে এসেছে।