চীন সারা পৃথিবীর জন্য পণ্য উৎপাদন করে। এজন্য চীনকে প্রচুর জ্বালানি আমদানি করতে হয়। আর এই তেল-গ্যাসের ৮০ শতাংশ আসে মালাক্কা প্রণালি হয়ে। তাই এই অঞ্চলের সবগুলো দেশই চীনের কাছে কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো হলো ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর। এই তিনটি দেশই মালাক্কা প্রণালির পাশে অবস্থিত। মালাক্কা খুবই সরু একটি প্রণালি। সবথেকে সরু অংশে এর প্রস্থ মাত্র ১.৭ মাইল। এই দেশগুলোর সাথে বড় কোনো সমস্যা হলে চীনের জ্বালানি আমদানি বিশাল হুমকির মুখে পড়বে। এতে চীনের অর্থনীতি পড়ে যাবে বিশাল চাপের মুখে।
এই দেশ তিনটি এখন পুরোপুরি অ্যামেরিকাপন্থী। কিন্তু তারপরও চীন কখনোই এই দেশগুলোর সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ করতে চায় না। চীন এই অঞ্চলের পরাশক্তি, ফলে চীন চাইলে শক্তি প্রদর্শন করে মালাক্কা প্রণালির আশেপাশের দেশগুলোকে চাপে রাখতে পারে। কিন্তু চীনের জ্বালানি বহন করা জাহাজগুলো একদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাক এটা চীন চায় না। এখন পর্যন্ত পুরো চীনের অর্থনীতি টিকে আছে বলতে গেলে এই মালাক্কা প্রণালির উপর নির্ভর করে। তাই এই অঞ্চলের যে কোনো সমস্যা সমাধান করার জন্য চীনের প্রথম টার্গেট থাকে আলোচনা করা; শক্তি প্রদর্শন নয়।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বা ভূ-রাজনীতি বুঝতে হলে জানতে হবে দেশটির ইতিহাস, ভৌগোলিক অবস্থান, ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বা ভূ-রাজনীতিকে গভীরভাবে বুঝার জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত বই সম্ভবত 'প্রিজনার্স অব জিওগ্রাফি'। রাশিয়া, চীন, অ্যামেরিকার মত পরাশক্তিগুলো কীভাবে তাদের ভূ-রাজনৈতিক নীতিগুলো ঠিক করে, রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিগুলো নির্ধারণ করে, সেটা যারা সহজ সরল ভাষায় বুঝতে চান তাদের জন্য এই বইটি একটা অসাধারণ রিসোর্স।
বইটি গুডরিডসে প্রায় এক লক্ষ রেটিং পাওয়ার পরেও ৪.২ ধরে রেখেছে! লেখক প্রতিটি অঞ্চলের আদি ইতিহাস থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাগুলোকে বিশ্লেষণ করেছেন একদম সহজ সরল ভাষায়।