জীবনের জলসাঘরে” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: একদিন উত্তর কলকাতার সিমলেপাড়ায় দুষ্টুমি করে ঘুরে বেড়াত যে-কিশোর, কুস্তির আখড়ায় লড়াইয়ে নামত, সে কীভাবে যেন একসময় সংগীতকে আপন করে নিল। সুধাসাগরের তীরে এসে দাঁড়াল সে। সেই প্রথম যৌবনে সংগীতই হয়ে উঠল তার একমাত্র সাধনা, নির্ভরযোগ্য সঙ্গী। আরও পরে তার ধ্যান জ্ঞান প্রেম ঈশ্বর। সেদিনের সেই কিশোর আজকের ‘জাতীয় শিল্পী’ মান্না দে। বাড়ির সাংগীতিক পরিবেশ, বিশেষত প্রবাদপ্রতিম শিল্পী তথা তাঁর ছোট কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে-র প্রত্যক্ষ তত্বাবধান ও আশীর্বাদ এবং অন্যান্য বিশিষ্ট সুরসাধকদের সাহচর্য পেয়েছিলেন। সুদীর্ঘ ষাট বছরেরও বেশি সময় মান্না দে তাঁর সংগীত- সাধনাকে অব্যাহত রেখেছেন অপরিসীম নিষ্ঠায়। আজ তিনি ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী। তাঁর কথা, তাঁর গানের কথা বলে শেষ হওয়ার নয়। কত স্মৃতি, কত সুর সেই কথাপ্রবাহের পরতে পরতে। বিচ্ছিন্নভাবে তিনি নিজেই তাঁর সংগীত- জীবনের কথা কখনও কখনও লিখেছেন। কিন্তু এই প্রথম তাঁর পূর্ণাঙ্গ আত্মকথা। এখানে সংগীত-জীবনের কাহিনীই শুধু নয়, তাঁর ব্যক্তিজীবনের অন্দরমহল পাঠকের সামনে তিনি খুলে দিয়েছেন নিঃশেষে। তাঁর সময়ানুবর্তিতা, নিয়মনিষ্ঠা, ঔদার্য, স্নেহশীলতা, মরমী মন, নিরহংকারী চরিত্র ও সংবেদনশীলতার নানা নিবিড় অনুষঙ্গ ও ছবি এমনভাবে আর কোথাও পাওয়া যাবে না। ‘জীবনের জলসাঘরে’ এক মহান ও চিরশ্রবণীয় শিল্পীর নিছক আত্মজীবনী নয়, দেশ-কাল-সময়ের প্রেক্ষাপটে আঁকা সুরলোকের এক বহুবর্ণী চিত্র।
প্রবোধ চন্দ্র দে ডাক নাম মান্না দে (Manna Dey, জন্ম: মে ১, ১৯১৯; মৃত্যুঃ ২৪ অক্টোবর, ২০১৩ ) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সেরা সঙ্গীত শিল্পীদের একজন। হিন্দি, বাংলা, মারাঠি, গুজরাটিসহ অজস্র ভাষায় তিনি ষাট বছরেরও অধিক সময় সঙ্গীত চর্চা করেছিলেন। বৈচিত্র্যের বিচারে তাঁকেই হিন্দি গানের ভুবনে সবর্কালের সেরা গায়ক হিসেবে স্বীকার করে থাকেন অনেক বিশেষজ্ঞ সঙ্গীতবোদ্ধারা। মান্না দে গায়ক হিসেবে ছিলেন আধুনিক বাংলা গানের জগতে সর্বস্তরের শ্রোতাদের কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় ও সফল সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব। এছাড়াও, হিন্দি এবং বাংলা সিনেমায় গায়ক হিসেবে অশেষ সুনাম অর্জন করেছেন। মোহাম্মদ রফি, কিশোর কুমার, মুকেশের মতো তিনিও ১৯৫০ থেকে ১৯৭০ এর দশক পর্যন্ত ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সঙ্গীত জীবনে তিনি সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি গান রেকর্ড করেন। সঙ্গীত ভুবনে তার এ অসামান্য অবদানের কথা স্বীকার করে ভারত সরকার ১৯৭১ সালে পদ্মশ্রী, ২০০৫ সালে পদ্মবিভূষণ এবং ২০০৯ সালে দাদাসাহেব ফালকে সম্মাননায় অভিষিক্ত করে। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে রাজ্যের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান "বঙ্গবিভূষণ" প্রদান করে।মান্না দে পদ্মশ্রী এবং পদ্মবিভূষণ খেতাবসহ অসংখ্য খেতাব অর্জন করেছেন।