কবিতা মূলত জগৎ ও জীবনের ভাবদর্শন যা রূপক ও যুক্তির সমন্বয়ে হৃদয়-সত্তায় মধুর অনুভূতি সৃষ্টি করে। অন্তরের বিমূর্ত ভাবের স্বরূপ উন্মোচন করে একজন কবি শব্দ ও ছন্দের মাধ্যমে মানব ও প্রকৃতির সুনিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করে পাঠককে আত্মোপলব্ধির গভীরে প্রবেশ করান। কবি তাহমিনা খাতুনও তাঁর কবিতায় জগৎ ও জীবনের সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করে প্রেম ও প্রকৃতি, দ্রোহ-ক্ষোভ, বিরহ-কাতরতা, নস্টালজিয়া, দেশপ্রেম ও মানবপ্রেমের প্রতি অনাবিল হৃদয়-সুষমা বর্ষণ করেন; যা কবিতাকে কোমল ও কান্তরূপে উত্তীর্ণ করে।
কবি তাঁর কবিতায় সহজ, সরল ও সাবলীল ভাষাকে তীব্র তাড়নার স্পর্শে সত্য ও কল্পনার শব্দমাল্য দ্বারা উপমা-অলঙ্কার, রস ও আত্মসত্তায় শিল্পে রূপান্তরিত করেন। ‘পাণ্ডর চাঁদ’ কাব্যে কবি তাহমিনা খাতুন ভাবব্যঞ্জনার অপার সৌন্দর্য, রূপক ও চিত্রকল্পের ব্যবহার দ্বারা সুন্দর ও স্বতন্ত্র কাব্য ঘরানা তৈরি করেছেন।
আমি তাঁর এই স্বতন্ত্র কবিত্ব সুষমার অনুরাগী পাঠক। আশা করি, এ-কবিতাগ্রন্থটি পাঠকের হৃদয়কে স্পর্শ ও আন্দোলিত করবে বলে আমার বিশ্বাস। আমি এ-গ্রন্থটির বহুল প্রচার কামনা করি।
তাহমিনা খাতুন একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী লেখিকা। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ১ লা মার্চ পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত আহম্মদপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে এই গ্রামেই। পেশায় একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী, বিশেষত নারীদের আইনি সহায়তা প্রদান এবং তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করেছেন। অনেক বছর প্রবাসে কাটিয়ে, প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোকে তিনি ধারণ করেছেন তাঁর লেখায়। বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন মাধ্যমে নিয়মিত লেখালেখি করে আসছেন তিনি, যা পাঠকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। তিনি গল্প, কবিতা, ছড়া, সমসাময়িক ঘটনাবলি, নারী ও শিশুর অধিকার, আইন প্রবন্ধ এবং ভ্রমণকাহিনি রচনা করে থাকেন। 'আমাদের সুজানগর' ওয়েবম্যাগে নিয়মিত লেখালেখি করছেন তিনি। তাঁর লেখার ভাষা সহজ, কিন্তু অর্থবহ, যা পাঠকদের মনকে গভীরভাবে স্পর্শ করে। তিনি তাঁর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা এবং প্রকৃতির সৌন্দর্যকে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, যা পাঠকদেরকে কল্পনার ডানায় ভর করে দূর দিগন্তের প্রান্তে নিয়ে যায়। 'যাপিত জীবনের কথকতা' তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই। আত্মজীবনীমূলক বইটিতে জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা ও গভীর উপলব্ধি তাঁর লেখায় প্রাণ পেয়েছে। 'দূর দিগন্তের হাতছানি' (১ম খণ্ড) বইটিতে তাঁর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা ও প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যকে পাঠকের সামনে জীবন্ত করে তুলেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় বসবাস করছেন।