আপনি কোন্ দলে থাকবেন?
আপনি যদি জান্নাতে যেতে পারেন, তাহলে আপনি সৃষ্টির সেরা জীব। আর যদি আপনি জান্নাত থেকে বঞ্চিত হন, আপনাকে যদি জাহান্নামে যেতে হয়, তাহলে আপনি সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রাণী। এই দুনিয়ার সকল মানুষের জন্য দুইটি আবাস। কারো জন্য শেষ মঞ্জিল হলো জান্নাত,আর কারো জন্য জাহান্নাম।
আপনি যে পথে চলবেন তার নাম হলো ‘সিরাতুম মুস্তাকিম’। আর এ পথ চলার পাথেয় হলো “হিদায়াত” (কুরআন)। যারাই হিদায়াত নিয়ে সিরাতুম মুস্তাকিমে চলবে, তাদেরকে ‘হিজবুল্লাহ’ বা আল্লাহর দল নামে কুরআনুল কারীমে আখ্যায়িত করা হয়েছে। দুনিয়ার বাকি সব মানুষেরা “হিজবুশ শয়তান” বা শয়তানের দলের অন্তর্ভুক্ত।
কিভাবে আল্লাহর দলে ইস্তাকামাত থাকবেনঃ
ঘুরে-ফিরে দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টার জীবন আপনাকে অতিবাহিত করতে হচ্ছে। দিন শেষ হলে রাত আসে, আবার রাত শেষে দিন আসে। আপনি যখন পৃথিবীতে এসেছেন, তাও ছিল দিন বা রাতের যেকোনো একটি সময়। আবার এই দুনিয়ার সফর শেষে যখন আপনি বিদায় নিবেন সেটাও এই দিন বা রাতের যেকোনো একটি সময়ই হবে। অর্থাৎ দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই আমাদের জীবনটা আবর্তিত হচ্ছে। চব্বিশ ঘণ্টার এই জীবনে চব্বিশটি গুন বর্জন এবং চব্বিশটি গুন অর্জনের দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনাকে এ পথে চলতে হবে। চব্বিশটি গুন বর্জন এবং চব্বিশটি গুন অর্জনের শিক্ষা আমরা কালেমা থেকেও পাইÑ
لأ إله إلا الله محمد رسول الله
এখানে চব্বিশটি হরফ, প্রথমে আমরা বর্জনের ঘোষণা দিচ্ছি যে, কোনো ইলাহ নেই,পরে অর্জনের ঘোষণা দিচ্ছি যে, জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহকেই ইলাহ্ মানবো এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লামকে আদর্শ নেতা মেনে চলবো। আবার একই কথা আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে সূরা বাকারার ২৫৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন,
مَنْ یَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَ یُؤْمِنْۢ بِاللّٰهِ
যে কেউ তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর ওপর ঈমান আনে। এখানে চব্বিশটি হরফ। আল্লাহ তাআলা তাগুতকে বর্জনের কথা বলে, তারপরে আল্লাহর উপর ঈমান আনার কথা বলেছেন। আর আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন যে,কেউ যদি এমনটি করে তবে সে ঈমানের উপর এমনভাবে ইস্তেকামাত থাকবে,তার ঈমান এতটাই মজবুত হবে যে, আল্লাহ্ থেকে কোনো শক্তিই তাকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।
فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰى١ۗ لَا انْفِصَامَ لَهَا
সে এমন একটি মজবুত অবলম্বন আঁকড়ে ধরে, যা কখনো ছিন্ন হয় না। এ পথের শেষ মঞ্জিল হলো চির সুখের, স্থায়ী বসবাসের আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামতে ভরপুর জান্নাত। জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাত লাভ করাটাই হলো মানব জীবনের সফলতা। আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ
একমাত্র সেই ব্যক্তিই সফলকাম হবে, যে সেখানে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে এবং যাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। [আলে ইমরান:১৮৫]
এ গুন সম্পন্ন লোকদের সমন্ময়ই আল্লাহর এই জমিনে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। খিলাফতের দায়িত্ব পালনের জন্যই আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। আর এ দায়িত্ব পালনের মধ্যেই রয়েছে মানব জীবনের সফলতা। কুরআনুল কারীমে বর্ণিত মানব জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতা সম্পর্কে চিন্তা ও গবেষণা করার সময় আমি যে সুগভীর সত্য উপলব্ধি করেছি। তাই এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতে আল্লাহ তায়ালার সাহায্যে আমি এ বিষয়ে আরো কিছু লেখার ইচ্ছা পোষণ করি। আল্লাহ তায়ালার রহমতই এ কাজের প্রধান সম্বল। গ্রন্থকার