"রকমারি নিরামিষ রান্না" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: বাড়ির রান্নাঘরে যেসব নিরামিষপদ তৈরি হয়, তাদের প্রতি অনেক বাঙালিই কোনও উৎসাহ দেখায় না। তারা মনে করে, এইসব পদ সাধুসন্তর খাদ্য কিংবা রােগীর পথ্য অথবা কোনও ব্রতউদ্যাপনের অঙ্গ। অথচ নিরামিষ রান্না যে আমিষ রান্নার চেয়েও বড় শিল্পকর্ম, তা খাদ্যরসিকদের নতুন করে বলে দিতে হয় না। বিষয়বৈচিত্র্যে নিরামিষ পদ আমিষকেও হার মানিয়ে দিতে পারে। সামান্য আনাজ-পাতি, শাক-ডাঁটা, চাল-ডাল দিয়ে এমন সব রসনালােলুপ পদ তৈরি হয়, যা বহুক্ষেত্রে ম্লান করে দিতে পারে মাছ-মাংস-ডিমের গরিমাকে। যদিও বাঙালির হেঁশেলে আমিষের কদরই বেশি। তবু নিরামিষের স্বাদবৈভবই আলাদা! রেণুকা দেবী চৌধুরানী তাঁর এই সযত্নরচিত গ্রন্থে নিরামিষ রান্নার যে-প্রণালীপরিচয় দিয়েছেন তা শুধু পরিমাণে বিপুল নয়, বৈচিত্র্যেও অভিনব। পুব বাংলার একটি লব্ধপ্রতিষ্ঠ জমিদার পরিবারের গৃহবধূরূপে। লেখিকা নিজের হাতে বেঁধে, এইসব পদ ভােজনরসিকদের খাইয়ে তৃপ্ত করেছিলেন। লুপ্তপ্রায় এবং প্রচলিত প্রায় সাতশাে নিরামিষ রান্না এবং মিষ্টি ও জলখাবারের সমাহার এই বইয়ে। এমন একটি সংকলন একালের রন্ধনপটীয়সীদের কাছে অপরিহার্য বলে গণ্য হবে। এই লেখিকার ‘রকমারি আমিষ রান্না' ইতিমধ্যেই বিপুল সমাদর লাভ করেছে।
রেণুকা দেবী চৌধুরানীর জন্ম ৩১ জুলাই, ১৯০৯। বাঘবেড়, ময়মনসিংহ। পিতা অতুলচন্দ্র ভাদুড়ী। ময়মনসিংহের কালীপুর ও মুক্তাগাছার জমিদার বংশের কৃতীপুরুষ ধীরেন্দ্রকান্ত লাহিড়ী চৌধুরীর সহধর্মিণী। দেশ বিভাগের পর কলকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস। ‘রকমারি নিরামিষ রান্না' ছাড়া এই লেখিকার রন্ধনবিষয়ক সমাদৃত অন্য গ্রন্থ ‘রকমারি আমিষ রান্না'। লেখিকার প্রয়াণ ২৮ এপ্রিল ১৯৮৫।