"স্বামী বিবেকানন্দ নতুন তথ্য নতুন আলো" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: অতীতের গৌরব, বর্তমানের দৈন্য ও দুর্দশার পারে উজ্জ্বলতর ভবিষ্যৎ ভারতের এই আকীর্ণ ত্রিকাল বিবেকানন্দের অন্তরাত্মায় ও মননে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। স্বল্পপরিমিত জীবন জুড়ে তিনি তার এই প্রিয় জন্মভূমির জন্য স্বপ্ন দেখেছেন, সেইসব স্বপ্ন রূপায়িত করার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। অন্যকে পরহিতায় জীবনদান করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এক নতুন চিন্তা, কর্মোদ্যোগ ও ইতিহাসসৃষ্টিই শুধু নয়, জীবৎকালে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এসবের প্রতীক এবং স্বয়ং ইতিহাস। এই স্বপ্নদ্রষ্টা সন্ন্যাসীর প্রয়াণের পর থেকে আজ পর্যন্ত বিবেকানন্দ-চর্চার তরঙ্গ স্তিমিত হয়নি। বরং নানা দিক থেকে আলাে ফেলে তার চিন্তা-চেতনা-স্বপ্নের অতলান্ত স্পর্শ করার প্রয়াস এখনও অব্যাহত। বিবেকানন্দ-চিন্তায় এই গ্রন্থের লেখক অর্ধশতাব্দী ধরে নিজেকে নিয়ােজিত রেখেছেন। একাজে তিনি অক্লান্ত। তার নিজের ভাষায়: “তরুণ জীবনে যাঁকে ধ্রুবতারা বলে গ্রহণ করেছিলাম, বহু সন্ধান। ও অভিজ্ঞতার পরেও তিনি আমার আকাশে উজ্জ্বল অচঞ্চল তারকা।” সমকালীন ভারতের প্রেক্ষাপটে বিবেকানন্দকে তিনি যেভাবে আবিষ্কার ও অনুসন্ধান করেছেন তা তুলনারহিত। এই গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট হয়েছে বিবেকানন্দ সম্পর্কে। আরও নতুন নতুন তথ্য, অনেকগুলি অনালােকিত ও অনালােচিত প্রসঙ্গ। গ্রন্থবদ্ধ এই আলােকবর্ষী প্রবন্ধগুলি বিবেকানন্দের বহুমুখ চরিত্রের বিশেষ বিশেষ অংশকে উজ্জ্বলতর আকারে প্রতিভাত করেছে। বিস্মৃতির ওপার থেকে কয়েকটি স্মৃতিকথাও খুঁজে এনেছেন লেখক, যেগুলি অপ্রচলিত হলেও বৈভবে পূর্ণ এবং বিবেকানন্দকে জানতে যার ভূমিকা অপরিসীম। লেখক তার প্রতিটি বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠা করেছেন তথ্যের ভিত্তিতে, স্বকৃত ব্যাখ্যার আশ্রয়ে নয়। এক বীরহৃদয় মহাপ্রাণ ও আত্মজাগানিয়া প্রতিটি রচনায় মূর্ত হয়ে উঠেছেন। বিবেকানন্দ-চর্চার প্রবাহে এই গ্রন্থ এক বিশিষ্ট সংযােজন বা মূল্যবান পরিপূরকই শুধু নয়, এক অনড়, অচল বিবেকানন্দ-প্রেমীর শ্রদ্ধার্ঘ্য।
শঙ্করীপ্রসাদ বসু - বিশ শতকের বঙ্গসংস্কৃতির এই অগ্রণী ব্যক্তিত্বের জন্ম ২১ অক্টোবর ১৯২৮ হাওড়া শহরে। শিক্ষা হাওড়া বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশন, রিপন কলেজ (বর্তমান সুরেন্দ্রনাথ কলেজ), প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। আবাল্য রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ আশ্রমের সঙ্গে যুক্ত। ১৯৫০-এ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এম.এ. পরীক্ষায় প্রথম।শ্রেণিতে প্রথম। শিক্ষকতা হাওড়া বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশন, হাওড়া দীনবন্ধু কলেজ, হাওড়া গালর্স কলেজ, আমহাস্ট স্ট্রিট সিটি কলেজ, বঙ্গবাসী কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৯৩এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রামতনু লাহিড়ি অধ্যাপকপদ থেকে অবসর গ্রহণের পর, আমৃত্যু রামকৃষ্ণ ইনস্টিটিউট অব কালচারের (গোলপার্ক) স্বামী বিবেকানন্দ আর্কাইভসের ডিরেক্টর এবং নিবেদিতা-চেয়ারে অধিষ্ঠিত। বাংলআ এবং ইংরাজীতে পঞ্চাশটিরও বেশি গ্রন্থের রগয়িতা এবং সম্পাদক। দেশী-বিদেশী পুরস্কারে সম্মানিত – সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, বিবেকানন্দ পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কার, বিদ্যাসাগর পুরস্কার, শরৎ পুরস্কার (ভাগলপুর),জগত্তারিণী মেডেল, সরোজিনী বসু মেডেল, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর লেকচারশিপ পুরস্কার (এশিয়াটিক সোসাইটি, কলকাতা), নিউইয়র্ক বেদান্ত সোসাইটি শতবার্ষিকী পুরস্কার ইত্যাদি। রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সাম্মানিক ডিলিট। নিউইয়র্ক এবং লসএঞ্জেলেস বঙ্গসম্মেলনে দুবার নিমন্ত্রিত অতিথি। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের ট্রাস্টি। দীর্ঘ অসুস্থতার পরে ৬ জুলাই ২০১৪এ রামকৃষ্ণ মিশন সেবাপ্রতিষ্ঠানে ছিয়াশি বছর বয়সে প্রয়াণ।