প্রি-অর্ডারের এই পণ্যটি 31 Dec 2024 তারিখে প্রকাশ পেতে পারে বলে প্রকাশনী থেকে জানানো হয়েছে। তবে বিশেষ কোন কারণে প্রকাশিত হওয়ার তারিখ পরিবর্তন হতেও পারে.
কমিয়ে দেখুন
সময় বাড়লো ক্লিয়ারেন্স সেল অফারের! বইয়ে ৭০% ও পণ্যে ৭৮% পর্যন্ত ছাড়!
সময় বাড়লো ক্লিয়ারেন্স সেল অফারের! বইয়ে ৭০% ও পণ্যে ৭৮% পর্যন্ত ছাড়!
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ড একটা যুগান্তকারী ঘটনা। তৎপরবর্তী ২০১০ সালে সেই হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত বিচারে অপরাধীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শাস্তি প্রদান করাটাও আরেকটা যুগান্তকারী ঘটনা। তবে নিঃসন্দেহে জাতির দলমত নির্বিশেষে সবার প্রত্য¶ সমর্থন ছিলো না এমন বিচারে। মুজিব হত্যাকাণ্ডের চ‚ড়ান্ত বিচারের রায় কার্যকরণের প্রেক্ষাপটে রচিত “স্বর্গলোকের আসর”-এ দেখা যাবে ঊর্ধ্বলোকে স্বর্গের আসর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতির প্রয়াত মহাপুরুষেরা বর্তমান বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি প্রত্য¶ করছেন। জামিল নামের দ্বিতীয় প্রজন্মের উঠতি যুবক-ছাত্র স্বর্গলোক থেকে আসা একটা আলোকধারার মাধ্যমে স্বপ্নযোগে দেখতে ও শুনতে পায় সোহরাওয়ার্দী, ভাসানী, আবুল মনসুর আহমদ, মুজিব ও জিয়ার মুখে তৎকালীন রাজনীতির কথোপোকথন। ভাষা আন্দোলন, ছয়দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৭ই মার্চ, ২৫শে মার্চ, আরো অনেককিছু। এসব শুনে জামিল ধাঁধাঁয় পড়ে যায় বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে, যা তাকে অনুসন্ধিৎসু করে তোলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে। জামিলের এলাকাতে এখন ছোঁয়া পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষের বিষাক্ত মানসিকতা, যেটা জাতীয় রাজনীতির ছায়া। এককালের শান্ত সুনিবিড় গ্রামগুলো স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও অশান্ত; হানাহানি, গুপ্তহত্যা, মামলা, আওয়ামী-বিএনপিতে পূর্ণমাত্রায় বিভক্ত। দেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের যুবক সমাজ এখন অসহিষ্ণু, উগ্র, এবং মুক্তিযুদ্ধ নামক নেশার আবেশে মাতাল; অথচ ওরা জানে না এর ইতিহাস, আর জানতেও তারা চায় না। অথচ সেই গ্রামগুলোর মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মানুষগুলো এখনো বন্ধুবৎসল, যদিও তারা সেসময় একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল। জামিলদের পাশের হলদিয়া বাজারের একটা চা দোকানে বসে ওইসব মুরুব্বিদের প্রতিদিনের আসর- মিনি সংসদ। সেখানে তারা আলোচনা করে বর্তমান দেশের রাজনীতির হালচাল, মুখ বাঁকিয়ে তুলোধুনা করে দেশের রাজনীতি, নেতা-নেত্রী আর দলগুলোর।
সময় এগিয়ে যায়। এর মধ্যে জামিল বুঝতে পারে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এদেশে কি বিষাক্ত ফাঁকাবুলির রাজনীতি হয়। এলাকার একজন স্বনামধন্য মুক্তিযোদ্ধা চিনু খুনকারের হাজারো অনৈতিক কার্যকলাপ জামিলের মনে প্রশ্ন তোলে তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধাদের চরিত্র সম্পর্কে; আবার নরহরি নামের একজন চালচুলোহীন হিন্দু পাগল-সদৃস বৃদ্ধের কাছ থেকে এক কালবৈশাখীর রাতে জামিল জানতে পারে ওর দাদা এবং বাবার জীবনের গোপন ইতিহাস। বিস্মৃতির গহিনে হারিয়ে যাওয়া নরহরি কাকা হয়ে ওঠে জামিলের কাছে খাঁটি মুক্তিযোদ্ধার উদাহরণ।
২০০৯ সালে দেশে নতুন সরকার আসে। নতুন সরকারের আমলে শেখ মুজিব নামের ‘একজন’ ব্যাক্তির হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়, কিন্তু মুজিব আমলে রক্ষী বাহিনীর হাতে নিহত তার দাদার মতো কথিত আরো ৩৫ হাজার নিহতের বিচার না হওয়ার প্রেক্ষিতে মুজিবের বিচার প্রশ্নবোধক হয়ে দাঁড়ায় স্বজনহারা জামিলের ও তার মায়ের কাছে। সেই গহিন রাতের ফাঁসির মুহূর্তে জামিল স্বপ্নে দেখে স্বর্গলোকের আসরে সেই জাতীয় মহাপুরুষেরা দোয়া-মুনাজাত করছেন একে একে পাঁচ জনের ফাঁসি দেয়ার সময়। কিন্তু জামিল আরো দেখলো সেখানে ক্রন্দনরত শেখ মুজিবকে। আবার আকাশে ঝুলন্ত সেই আসরের নীচে সারা বাংলাদেশ জুড়ে জামিল শুনতে পাচ্ছিল হাজার হাজার মনুষ্য-কঙ্কালের আহাজারি ঠিক সেই ফাঁসির মুহূর্তে। জামিলের মনে জাগে এক দুঃসহ প্রশ্ন- স্বর্গলোকের আসরে ক্রন্দনরত মুজিবের চোখের জল কি তার প্রতি সুবিচারের আনন্দাশ্রু, নাকি সেই ৩৫ হাজার আত্মার প্রতি তার অত্যাচার আর অবিচারের বেদনাস্রোত?
এ উপন্যাসের গল্পধারা : জাতীয় পরিচয়ের ঐতিহাসিক আত্মানুসন্ধান।