গত জুন–জুলাই–আগস্টে দুঃসাহসী ছাত্ররা কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ধাপে ধাপে শুধু শেখ হাসিনার সরকার পতনের দাবিতে পরিণতই করলেন না, তাঁর স্বৈরাচারী শাসনের পতন ঘটিয়েও ছাড়লেন। এই একটি বাক্যে যা বলা হলো, তার মাঝখানে বয়ে গেল রুদ্ধশ্বাস একটি সময়। ছাত্রদের সঙ্গে যুক্ত হলেন নানা শ্রেণি ও গোষ্ঠীর অগুনতি মানুষ। মুক্তির দাবিতে রাজপথে জোয়ারের মতো নেমে আসা মানুষের ওপর চলল সরকারের রাজনৈতিক সংগঠন আর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নিষ্ঠুর আক্রমণ। বৃষ্টির মতো চলল গুলি। পথে পথে ঝরে পড়ল শত শত লাশ। হাত–পা–চোখ হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়লেন অসংখ্য তরুণ–তরুণী। এই প্রায়–যুদ্ধাবস্থার ভেতরে চলেছে প্রথম আলোর আলোকচিত্র সাংবাদিকদের ছবি তোলা, ঘটনার প্রমাণ সংগ্রহ। ঝুঁকি ছিল পদে পদে। ছিল অঝোর ধারায় রাবার বুলেটের বৃষ্টি। ছিল সরকারের সশস্ত্র পেটোয়া বাহিনীর হামলা। জীবন্ত মানুষ চোখের সামনে লাশ হয়ে ঝরে পড়েছে রাস্তায়। হাতে–পায়ে ব্যান্ডেজ বা রক্তের দাগ নিয়ে কেউ কেউ ফিরতেন অফিসে।
মাথায় ওপরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে গেছেন আলোকচিত্র সাংবাদিকেরা। তখন যা ছিল সংবাদমাধ্যমের প্রতিদিনের সাংবাদিকতা, এখন সেসব ভবিষ্যতে ইতিহাস রচনার উপাদান। সেই উপাদানের নির্বাচিত কিছু অংশ সংগৃহীত রইল এই প্রকাশনায়। ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনার প্রস্থানের মধ্য দিয়ে একটি স্বৈরাচারী শাসনকাল ও তার শেষ পর্বের রক্তাক্ত অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে। সে ঘটনার তিন মাস পূর্ণ হলো। যে মুক্তির আশা ও স্বপ্নে মানুষেরা সে সময় গুলির সামনে বুক পেতে দিতে ভয় পাননি, সেই মুক্তি আসুক। মানুষের মুক্তির স্বপ্ন অমর হোক।