কার্টুন শুধু ক্ষণিকের কৌতুকের বিষয় নয়। কার্টুন নির্দিষ্ট একটি সময়ের প্রতিচ্ছবি। বিশেষ করে রাজনৈতিক কার্টুনের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য। অবশ্য, সমাজ, অর্থনীতিকে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না।
১৯৭২-৭৫ বাংলাদেশের ইতিহাসে মাইল ফলক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে এলে, বাংলাদেশের শাসনভার তাঁর ওপর ন্যস্ত হয়। আমরা যারা ঐ সময় তরুণ তারা জানি কী দুঃসময় ছিল তখন। কিছু ছিল না বাংলাদেশে। কিন্তু ছিল অভ্যন্তরীণ বহুবিধ সমস্যা ও ষড়যন্ত্র। আবার সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল স্বাধীনতা পেলেই 'সোনার বাংলা' প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষের প্রত্যাশার যোগান দিতে পারছিলেন না দেশনেতা। সে কথা বলছিলেনও। এছাড়া ছিল বর্হিষড়যন্ত্রও। বিষন্ন সময় যদিও ছিল, তারপরও বলি দেশ গড়ে ওঠার সময়ও ছিল সেটি। সে সময়কে দেশের ভিত্তি গড়ার সময় হিসেবে দেখাও বাঞ্ছনীয় এবং যখন দেশের পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু নিয়ে এসেছেন তখন সপরিবারে নিহত হন তিনি।
১৯৭২-৭৫ সময়ে পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন কার্টুনিস্ট দেশে-বিদেশে বাংলাদেশ নিয়ে অনেক কার্টুন এঁকেছিলেন। সেখানে যেমন শ্লেষ, কৌতুক আছে, তেমনি আছে নিত্যদিনকার সমস্যাবলির সরব উপস্থিতি। এখানে একটি বিষয় প্রাসঙ্গিক। গণতন্ত্রের একটি মাপকাঠি কার্টুন। বঙ্গবন্ধু এইসব কার্টুন নিয়ে কখনও কোন মন্তব্য করেননি, অসহিষ্ণুতাও প্রকাশ করেন নি। যদিও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার প্রখ্যাত সাংবাদিক ফ্রাংক মোরেস, আবু আব্রাহামের কার্টুন নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, কার্টুনিস্ট এক ফোটা কালি দিয়ে একজনকে খুন করতে পারেন। বাংলাদেশের পরবর্তী সরকার সমূহ কার্টুনকে কখনও সাদরে গ্রহণ করতে পারেনি। কার্টুনিস্ট নিঃগ্রহের ঘটনাও ঘটেছে।
ইতিহাসবিদ ড. মুর্শিদা বিন্তে রহমান অনেক পরিশ্রমে পাঁচ বছরের চেষ্টায় সেই সময়ের সেই সব কার্টুনের এক বিশাল সংগ্রহ সংকলন করতে সমর্থ হয়েছেন। কার্টুনকে তিনি বিবেচনা করেছেন ইতিহাসের উপাদান হিসেবে। কার্টুন সংশ্লিষ্ট বিবরণেই তা লিপিবদ্ধ হয়েছে। ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে কার্টুনের সাহায্যে একটি বিশেষ সময়কে তিনি এই প্রথম তুলে ধরলেন। সেদিক থেকে কার্টুনে জীবনচিত্র একটি অসাধারণ গ্রন্থ। ভবিষ্যতে যারা এই বিশেষ সময় নিয়ে গবেষণা করবেন, তারা হাতের কাছেই পাবেন আকর হিসেবে কার্টুনে জীবনচিত্র। কার্টুনও যে ইতিহাসের উপজীব্য সেটি ড. মুর্শিদা তুলে ধরতে পেরেছেন। এটিই তাঁর বিশেষ কৃতিত্ব।