মহান আল্লাহ প্রতিটি মানবসন্তানের অন্তরে তাঁর তাওহীদের বীজ বুনে দিয়েছেন, যার ওপর সে বেড়ে উঠে। কিন্তু তার পিতা-মাতা, পরিবেশ, বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষা-দীক্ষা, নাফসে আম্মারা ও বিতাড়িত শয়তান তাকে সে স্বাভাবিক প্রকৃতি থেকে বিচ্যুত করে দেয়।
সন্তান-সন্ততিদেরকে এ বিচ্যুতি ও ধ্বংসের অতল গহ্বর থেকে বাঁচাতে হলে যথাযথ রোগ নির্ণয় করতে হবে, রোগের প্রতিষেধক খুঁজতে হবে এবং তার ঔষধের ব্যবস্থা করতে হবে। আজ আমাদের পরিবারগুলোতে নৈতিক শিক্ষা নেই বললেই চলে। আমাদের সমাজে নৈতিক শিক্ষার বিষয়টি উপেক্ষিত। শিক্ষায়তনগুলোতে তা শূন্যের কোটায় গিয়ে ঠেকেছে। তাই সন্তানরা কোথাও আদর্শ খুঁজে পাচ্ছে না। না তাদের পিতা-মাতার কাছে, না তাদের শিক্ষকদের কাছে। সন্তানরা অতি মাত্রায় প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। নিজের অজান্তেই তারা এমন সব বিষয় শিখছে যা তাদের বিশ্বাস ও ঈমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাদেরকে আদব ও শিষ্টাচার থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে। কার্টুন ও রীল তাদেরকে বেহায়া বানিয়ে দিচ্ছে। তাদেরকে অপসংস্কৃতির সয়লাবে ভাসিয়ে দিচ্ছে। তারা ফালতু জিনিসে সময় নষ্ট করছে। জীবনকে উপভোগ করার নামে তাদেরকে জীবনের মূল্য বিসর্জন দিতে হচ্ছে। তাদেরকে দুনিয়ায় আসার মূল উদ্দেশ্য থেকে বিমুখ রাখা হচ্ছে।
এ সময়ে সন্তানদেরকে দীনের গণ্ডিতে রাখা ও দীনকে তাদের কাছে প্রিয় করে তোলা চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য যেসব গ্রন্থ রচনা করা হয়, যেসব নাটক-নভেল তারা চোখ দিয়ে দেখে থাকে সে সবের মধ্যে দীন ও দীনকে খারাপভাবে চিত্রায়িত করা হয়। তারা কোনোভাবেই দীন ও আকীদাকে সুন্দরভাবে নিতে সক্ষম হচ্ছে না। আকাশ সংস্কৃতির নামে যেসব অপসংস্কৃতি চালু আছে তাতে কী পরিমাণ শির্ক, বিদ‘আত, কুফর, নিফাকের অনুপ্রবেশ শিশু ও কিশোরদের অন্তরে প্রবেশ করছে তার হিসাব কে রাখে? দীনকে ধরে রাখা এখন যেন সত্যিই জ্বলন্ত অঙ্গারকে ধরে রাখার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে দীনের ওপর ঠিকে থাকা কত যে দুষ্কর তা কেবল একজন দীনদার ও দা‘ঈ ব্যক্তি হাড়ে হাড়ে অনুভব করতে পারেন।
কিন্তু বিপদ ও ফিতনা যত বড়ই হোক না কেন, হতাশ হওয়া যাবে না। সকলের উচিত সে ফিতনাকে শরী‘আতের নির্দেশনার মধ্যে অবস্থান করে প্রতিহত করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। সন্তানদেরকে বিপদ ও ফিতনার মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে যার যতটুকু সামর্থ্য আছে তা ব্যয় করা। সেজন্য আমাদেরকে প্রচুর পরিমাণে শিশুতোষ সাহিত্য ও শিশু-কিশোদের উপযোগী রচনায় মনোনিবেশ করা।
আলোচ্য গ্রন্থটি শিশু-কিশোর উপযোগী একটি আকীদার গ্রন্থ, যা একটি শিশুকে আল্লাহর ঈমানের দিকে, ইবাদতের দিকে ও আদব-আখলাকের দিকে পথ দেখাবে; অনুরূপ কিশোরদেরকে সঠিক পথে চলতে সহায়তা করবে বলে আমার বিশ্বাস।