কবি মোহাম্মদ আজাদ কবিতা অন্তঃপ্রাণ মানুষ। কবিতায় তার সাধনা ও সিদ্ধি অন্বেষণ দীর্ঘ সময়ের হলেও মৌলিক এবং অনুবাদ কবিতা নিয়ে গ্রন্থাকারে এটিই প্রথম প্রকাশ। তাঁর মৌলিক কবিতাগুলোতে মূলত জীবনের বিভিন্ন দিক যেমন : সময়ের প্রবাহ, প্রেম-আকাক্সক্ষা, অপেক্ষা, যন্ত্রণা, আত্মবোধ, প্রকৃতির প্রভাব, স্বপ্ন, জীবনের অস্থিরতা ও স্থিতি এবং অস্তিত্ববাদ উঠে এসেছে।
কবির কবিতাগুলি একটি জীবন্ত আবেগময় দৃশ্যপট সৃষ্টি করে, যা পাঠককে মানব অভিজ্ঞতার সাধারণ অনুভূতির সাথে যুক্ত করে। তাঁর প্রতিটি কবিতা একটি স্বতন্ত্র রচনা হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকে, তবে একত্রে তারা জীবনের বহুমুখী যাত্রাকে প্রকাশ করে। অধিকন্তু এটি জীবনের সৌন্দর্য, আনন্দ এবং প্রকৃতি, সাধারণ মুহূর্ত এবং অন্তরের শান্তির মধ্য দিয়ে অনন্ত সুখের প্রবাহ উদযাপন করে। গ্রন্থভুক্ত কবিতাগুলি মানুষের জীবন, অনুভূতি, দার্শনিক চিন্তা এবং অস্তিত্বের অভিজ্ঞানগুলিকে গভীরভাবে প্রকাশ করে। ‘জীবনের গান’, ‘জীবনের জয়গান’, ‘জীবনের ঝরা পাতা’ কবিতাতে জীবনকে একটি অবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া হিসেবে মহিমান্বিত করে, যেখানে সমৃৃদ্ধি, বোঝাপড়া এবং পূর্ণতার বিষয় অন্তির্নিহিত থাকে।
‘জীবনের গান’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে কবি তাঁর বোধের সফল প্রকাশ ঘটিয়েছেন, যা পাঠকের মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। তাঁর শিল্পিত ভাষা, শব্দচয়ন, ভাবনার স্পষ্টতা এবং কবিতার গভীরতা তাঁর উৎকর্ষতার প্রমাণ।
কবিতা শিল্পের সৃজনশীল রূপ। প্রতিটি কবিতার নিজস্ব ভাষিক সৌন্দর্য এবং ছন্দ থাকে, যা কবি তৈরি করে থাকেন। অনুবাদকের কাজ হলো সেই সৌন্দর্য এবং ছন্দের অনুভূতিটিকে অন্য ভাষায় সঠিকভাবে রূপান্তর করা। এই গ্রন্থে মোহাম্মদ আজাদের অনূদিত কবিতাগুলো বিভিন্ন ভাষার শ্রেষ্ঠ কবিদের কবিতা। মূল কবির মৌলিক ভাবনা, আবেগ, ছন্দ, গতি, শব্দের ব্যঞ্জনা, সাংস্কৃতিক নির্ভরতা, চিত্রকল্প এবং সুরটিকে অনুবাদক জীবন্ত রেখেছেন। অনুবাদে তিনি মূর্ত এবং বিমূর্ত ভাবনার এক অভিনব শৈলী ব্যবহার করেছেন, যার ফলে কবিতার মূলে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
আজাদের অনূদিত প্রতিটি কবিতা নিজস্ব ভাষা ও রূপে মানবসত্তার অনুভূতি এবং চাহিদা, সংগ্রামের সঙ্গে সম্পর্কিত তত্ত্ব-ধারণা প্রকাশ করেছে। এসব কবিতা যেন জীবনের নানান দিকের প্রকাশ, প্রেম, সংগ্রাম, শোক, স্বাধীনতা, সুন্দরতা নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং নিজস্ব ভাবনার জগতে ডুবিয়ে পাঠককে ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি দেয়।