"বাংলার নকশি কাঁথা" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: নকশি কাঁথা আমাদের একটি অতি প্রাচীন শিল্পকলার ঐতিহ্যকে একাল অবধি বয়ে নিয়ে চলেছে। দুহাজার বছরেরও বেশি পুরনাে এই বিশিষ্ট শিল্পশৈলীটি ভারতীয় উপমহাদেশের নানা অঞ্চলেই যদিও দেখা যায়, তবে বাঙালির সংস্কৃতিবলয়ে এর প্রকাশ ঘটেছে এক অনন্য নিজস্বতায়। দুর্জনি থেকে জায়নামাজ, আর্শিতা থেকে বায়তন, খিচা থেকে সুজনিবহু বিচিত্র আকারে এবং নামে তার পরিচিতি। রানফোঁড়, ডালফোঁড়, ক্রশফোঁড়, বেঁকিফোঁড়, জালিফোঁড়— সুচসুতাের নানান কারুকৃতিতে তার উদ্ভাসন। বাংলার গৃহবধূরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, প্রীতি-অনুরাগের আবেগ মিশিয়ে অতি সাধারণ উপকরণ দিয়ে, এই অসাধারণ শিল্পকলাকে যেভাবে সঞ্জীবিত রেখেছেন, তারই এক তন্ময় অনুসন্ধানের লব্ধফল সঞ্চিত হয়েছে এই বইয়ে। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে পায়ে হেঁটে এবং নানা সংগ্রহশালার সম্পদসম্ভারগুলি নিজের চোখে যাচিয়ে দেখে এই ম্যাগনাম ওপাস’-টিকে নির্মাণ করেছেন লেখিকা। বহুবছরের ক্ষেত্রসমীক্ষণ এবং অন্বিষ্ঠ-গবেষণার নির্যাস ছড়িয়ে আছে এই গ্রন্থের পাতায় পাতায়। নকশি কাঁথার অসংখ্য মােটিফ বা চিত্রপ্রতিমার প্রত্যক্ষ রূপচিত্রণ ও বিশ্লেষণ, এক একটি বিখ্যাত কাঁথার ইতিবৃত্ত বর্ণনা এবং তাদের নান্দনিক ব্যঞ্জনার দিকনির্দেশ এই বইয়ের উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য। অজস্র রঙিন ও সাদাকালাে ছবির মাধ্যমে সমস্ত আলােচনাকে নকশি কাঁথার মতােই বাত্ময় করে তুলেছেন এই গ্রন্থের রচয়িত্রী।