বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ থেকে নেওয়া চাঁদের পাহাড়-এর কাহিনি এক বাঙালি অভিযাত্রীর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। শঙ্কর রায় চৌধুরী এই উপন্যাসের নায়ক, গ্র্যাজুয়েশন করার পর পাটকলে চাকরি পায়। কিন্তু সে রোমাঞ্চ খোঁজে। সে আফ্রিকার দুর্গম স্থানে যেতে চায়। অবশেষে তার গ্রামের এক অধিবাসী, যে আফ্রিকায় কাজ করে, তার সহায়তায় সে উগান্ডা রেলওয়েতে চাকরি পায়। এখানেই সে পর্তুগিজ অভিযাত্রীক ও স্বর্ণসন্ধানী ডিয়েগো আলভারেজ-এর দেখা পায়। আলভারেজ তাকে তার সময়ের ঘটনা বলে। সে এবং তার সঙ্গী জিম কার্টার পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হীরক খনির সন্ধান পায়। কিন্তু ভয়ংকর জন্তু বুনিপ জিমকে মেরে ফেলে এবং আলভারেজ ফিরে আসতে বাধ্য হয়। সব শুনে শঙ্কর ক্লার্কের চাকরি ছেড়ে দিয়ে আলভারেজের সাথে খনি অনুসন্ধানে বের হয়। তারা ঘন জঙ্গলে প্রবেশ করে। পথে তাদের অবর্ণনীয় অসুবিধা হয়। জলন্ত আগ্নেয়গিরি তাদের পথে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এক পর্যায়ে আলভারেজকেও সেই বুনিপ মেরে ফেলে। শঙ্কর একা হয়ে পড়ে। শঙ্কর নিজের অজান্তেই হীরকের খনি খুঁজে পায়। সেই গুহায় সে পথ হারিয়ে ফেলে। এক পর্যায়ে কিছু পাথরের সহায়তায় সে গুহা থেকে বের হতে সক্ষম হয়। সে সাথে করে কিছু পাথর নিয়ে আসে। আসলে সেই পাথরগুলো আর কিছুই নয়, কাঁচা হীরা। কিন্তু সে ততক্ষণে কালাহারি মরুভূমিতে পথ হারিয়েছে। নিজের প্রাণ বাঁচানোই তখন দুষ্কর। মরুভূমিতে সে জলের অভাবে প্রায় মৃত্যুবরণ করেছিল। তার মাথার উপর শকুনেরা ঘোরাফেরা শুরু করে। পথে সিংহের সাথে তার যুদ্ধ হয়। অবশেষে এক সার্ভে টিম তাকে খুঁজে পায় এবং মুমূর্ষু অবস্থায় সলসবেরি, রোডেশিয়ায় নিয়ে গিয়ে বাঁচায়।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কিছু কালজয়ী উপন্যাস রচনার মাধ্যমে জয় করে নিয়েছেন বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের হৃদয়। শুধু উপন্যাসই নয়, এর পাশাপাশি তিনি রচনা করেছেন বিভিন্ন ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, দিনলিপি ইত্যাদি। প্রখ্যাত এই সাহিত্যিক ১৮৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন, তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল যশোর জেলায়। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করেন, যার প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর প্রথম বিভাগে এনট্রান্স ও আইএ পাশ করার মাধ্যমে। এমনকি তিনি কলকাতার রিপন কলেজ থেকে ডিস্টিংশনসহ বিএ পাশ করেন। সাহিত্য রচনার পাশাপশি তিনি শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমূহ এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো 'পথের পাঁচালী', যা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হওয়ার মাধ্যমে। এই উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় অর্জন করেছেন অশেষ সম্মাননা। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই এর মধ্যে আরো উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো 'আরণ্যক', 'অপরাজিত', 'ইছামতি', 'আদর্শ হিন্দু হোটেল', 'দেবযান' ইত্যাদি উপন্যাস, এবং 'মৌরীফুল', 'কিন্নর দল', 'মেঘমল্লার' ইত্যাদি গল্পসংকলন। ১০ খণ্ডে সমাপ্ত ‘বিভূতি রচনাবলী’ হলো বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমগ্র, যেখানে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার পৃষ্ঠায় স্থান পেয়েছে তার যাবতীয় রচনাবলী। খ্যাতিমান এই সাহিত্যিক ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর বিহারের ঘাটশিলায় মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি মরণোত্তর 'রবীন্দ্র পুরস্কারে' ভূষিত হন।