প্রকৃতিবিজ্ঞানী গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য (১৮৯৫-১৯৮১) অপ্রথাগতভাবে কৈশোর জীবন থেকে বিজ্ঞানচর্চার যে কাজ শুরু করেছিলেন, সে প্রতিচ্ছাপ জীবনের শেষ পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ ছিল। সে এক বিচিত্র জীবন-কৌতূহলোদ্দীপক ও প্রেরণামূলক দৃষ্টান্তও বটে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে জীবন শুরু হলেও প্রথম জীবনে গ্রাম্য স্কুলে শিক্ষকতাকালে ১৯১৯ সালে তৎকালীন নামকরা 'প্রবাসী' পত্রিকায় তাঁর একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ ছাপা হয়-'পচা গাছপালার আশ্চর্য আলো বিকিরণ করবার ক্ষমতা'। সেটি প্রখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যকে ডেকে পাঠান এবং পরে 'বসু বিজ্ঞান মন্দির'-এ তাঁর সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেন। সেখানে গোপালচন্দ্র বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ পান এবং প্রতিষ্ঠানটির পত্রিকায় তাঁর গবেষণাপত্র প্রকাশ করে খ্যাতি লাভ করেন। পরে কলকাতায় আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু 'বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ' গঠন ও মাসিক 'জ্ঞান ও বিজ্ঞান' পত্রিকা প্রকাশ করলে গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যকে সে কাজে সম্পৃক্ত করে নেন। প্রথমে গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য 'জ্ঞান ও বিজ্ঞান' পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক হলেও দু'বছরের মধ্যে সম্পাদক ও পরে প্রধান সম্পাদক হয়েছিলেন। বাংলাভাষায় বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞানকে সাধারণ্যে জনপ্রিয় করার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর মৃত্যুর কয়েক মাস আগে প্রথা ভেঙে বিজ্ঞানী গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যকে সাম্মানিক ডিএসসি ডিগ্রি প্রদান করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সে এক বিরল ঘটনা।