১৯৩০-এর শতকের মাঝামাঝিতে উর্দু সাহিত্য-সেবকদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত আনজুমান-এ-তরক্কী পসন্দ মুসানিফিন ছিল প্রগতিপন্থি একটি সাহিত্য আন্দোলন। এই ধারাটিই পরবর্তীকালে ভারতবর্ষজুড়ে হিন্দি, বাংলা, মারাঠি, পাঞ্জাবি, তেলেগু ইত্যাদি ভাষায় প্রসারিত হয়। সমাজতন্ত্রী চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত এই সাহিত্যিকদের স্বপ্ন ছিল রাষ্ট্রীয় নিপীড়নমুক্ত একটি সমতাপূর্ণ সমাজ।
দেশভাগের পর প্রগতিশীল সাহিত্যিকদের কেউ কেউ পাকিস্তানে চলে যান। খুব শীঘ্রই তাঁরা পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় শত্রু বলে বিবেচিত হতে থাকেন। ১৯৫১ সালে পাকিস্তানে ‘রাওয়ালপিন্ডি ষড়যন্ত্র মামলা’য় ফয়েজ আহমদ ফয়েজ এবং সাজ্জাদ যহীরকে গ্রেফতার করে বিচার শুরু করা হয়। তাঁদের প্রকাশনা ও সভা-সমিতির ওপর আসতে থাকে নানা রকম বিধিনিষেধ। প্রগতিশীল এই সাহিত্যিকেরা যেমন সামরিক শাসন, নাগরিক অধিকার হরণ, জাতিগত বা ধর্মীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছেন, তেমনি নারীর সমতা, যৌনতা, ইত্যাদিকে তারা তাদের সাহিত্যের বিষয়বস্তু করেছেন। ফলে রাষ্ট্র কিংবা রক্ষণশীল সমাজ, উভয়ের খড়গ থেকে তাদের কখনোই রেহাই মেলেনি। প্রবল মনের মুখেও বিভিন্ন প্রজন্মের পাকিস্তানি উর্দু কবি ও লেখকেরা তাঁদের রচনায় প্রগতিশীল চেতনার ছাপ রেখেছেন। বর্তমান সংকলনটি প্রতিনিধিত্বমূলক পনেরো জন উর্দু কবি- ফিরাক গোরখপুরী, জোশ মালিহাবাদী, সাজ্জাদ যহীর, মখদূম মুহিউদ্দীন, বামিক জৌনপুরী, আসরার-উল-হক মজায, ফয়েজ আহমদ ফয়েজ, মুঈন আহসান জযবী, আলী সর্দার জাফরি, জাঁ নিসার আখতার, আহমদ নাদীম কাসমী, কাইফি আযমি, মজরূহ সুলতানপুরী, সাহির লুধিয়ানভি, হাবীব জালিব-এর নির্বাচিত কবিতার বাংলা অনুবাদ।
সফিকুন্নবী সামাদী (জন্ম: ১৯৬৩)।অধ্যয়ন: স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর (বাংলা), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক। হিন্দী-উর্দু সাহিত্যে আগ্রহী। পিএইচ.ডি গবেষণায় তুলনামূলক আলোচনা করেছেন উর্দু-হিন্দী ঔপন্যাসিক মুন্সি প্রেমচাঁদ এবং বাংলা ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্রের। তাঁর কয়েকটি অনুবাদগ্রন্থ বেরিয়েছে উর্দু এবং হিন্দী থেকে।