ভূমিকা ইলমে ওহী তথা আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানই হল পৃথিবীর সবচাইতে মূল্যবান জ্ঞান। সেজন্য ইলম ও আলিমের মর্যাদা পৃথিবীর সকল জ্ঞান ও জ্ঞাণীর উর্ধ্বে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ এ জ্ঞানের মূল্য ও মর্যাদা অনুধাবন করতে পারে না। সে কারণে তারা শুধুমাত্র বস্তুবাদী বিদ্যা এবং বস্তুর উৎকর্ষের জন্যেই সদা ব্যস্ত । কিন্তু বাস্তব সত্য হল বস্তুবাদী বিদ্যা পৃথিবীকে মুক্তি দিতে পারেনি এবং মানবতার প্রকৃত উন্নতি সাধান করতে পারেনি, বরং বস্তুপুজারী বিদ্যা মানবতার সংকটকেই বাড়িয়ে তুলেছে। এবং মানবতার চিরন্তন মানবিক মূল্যবোধকে পদদলিত করছে। আরও একটি দুঃখজনক সত্য হল ইলমে নবুওয়তের শিক্ষার্থীদের অনেকেও এ ইলমের কদর ও মূল্য যথার্থরূপে বুঝে উঠতে পারেন নি। সে কারণে সব চাইতে মূল্যবান সম্পদ লাভ করেও তারা হীনমন্যতাবোধের শিকার হন এবং বস্তুর পূজারীদেরকে নিজেদের চাইতে সফল জ্ঞান করেন। তাই সর্বশ্রেণীর মানুষের কাছে বিশেষভাবে ইলমে দ্বীনের শিক্ষার্থীদের কাছে ইলমে ইলাহীর মূল্য ও মর্যাদা এবং এর ধারক বাহকদের পরিচয় যথার্থভাবে তুলে ধরা অত্যাবশ্যক। পৃথিবীর জন্য তারা কতটা প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর এবং পরকালে তাদের প্রাপ্তি কত অধিক তা তুলে ধরে তাদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্বন্ধে তাদেরকে সচেতন করা দরকার । আলহামদুলিল্লাহ বিংশ শতাব্দীর বিরল প্রতিভা মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল হাসান নদভী রহ. দ্বীনী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত তাঁর বিভিন্ন ভাষণে ইলম ও আলিমের মর্যাদা, তাদের পরিচয় ও তাদের দায়িত্ব কর্তব্যের কথা যথাযথভাবে তুলে ধরেছেন। ইসলামী জ্ঞান ও ইসলামী সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র দারুল উলূম দেওবন্দে দ্বীনের বিশুদ্ধ আহরণ এবং মহান আকাবিরগণের পবিত্র সুহবত ও সান্নিধ্যের বদৌলতে মাওলানা আবুল হাসান নদভী রহ. নিজেকে একজন উঁচুদরের জ্ঞানী, বুযুর্গ ও আদর্শ মানুষরূরে গড়ে তুলতে পেরেছিলেন, যার ফলে তাঁর কথাগুলোও অত্যন্ত মূল্যবান হয়েছে, যা সহজেই দ্বীনী শিক্ষার্থীদের হৃদয় কে প্রভাবিত করে এবং তাদেরকে উৎসাহিত ও জাগ্রত করে। তার সে সকল ভাষণ সংকলিত করে ‘পা জা সুরাগে জিন্দেগী’ নামে যে গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তা সর্বশ্রেণীর মানুষের জন্যই উপকারী, তবে দ্বীনী শিক্ষার্থীদের জন্য তা বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়।
আমার স্নেহভাজন খন্দকার মনসুর আহমদ এ গ্রন্থ বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন জেনে আমি খুব আনন্দিত হয়েছি। আমি আশা করি বাংলা ভাষা- ভাষীগণ এর দ্বারা বিশেষভাবে উপকৃত হবেন। আমি দু’আ করছি যেন আল্লাহ তা’আলা মূল গ্রন্থের মত এ অনুবাদ গ্রন্থকেও কবুল করেন। এবং অনুবাদককে এ গ্রন্থের মত আরও মুল্যবান বই পুস্তক অনুবাদ, রচনাও প্রকাশের তাওফীক দান করেন। আমীন!
আল্লাহর পথের এক মহান দাঈ,ইলমে ওহীর বাতিঘর যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী। খাঁটি আরব রক্তের গর্বিত বাহক।বিশ্বময় হেদায়েতের রোশনি বিকিরণকারী।উম্মতের রাহবর ও মুরুব্বি। কল্যাণের পথে আহ্বানে চিরজাগ্রত কর্মবীর। জন্ম ১৯১৪ ঈসাব্দে। ভারতের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সূতিকাগার উত্তর প্রদেশের রাজধানী লাখনৌর রায়বেরেলীতে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আদ্যোপান্তই দারুলউলুম নদওয়াতুল উলামায়। অধ্যাপনা জীবনের সিংহভাগও এই প্রতিষ্ঠানে নিবেদিত ছিলেন। আল্লামা নদভীর খ্যাতির সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে "সীরাতে সাইয়েদ আহমদ শহীদ" রচনার মাধ্যমে।গ্রন্থটি গোটা ভারতবর্ষে তাকে পরিচিত করে তুলে।এরপর তিনি রচনা করেন 'মা যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমিন' (মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারাল) নামক কালজয়ী গ্রন্থ।যা তাকে প্রথমত আরববিশ্বে ও পরবর্রতীতে বৈশ্বিক সুখ্যাতি এনে দেয়। এ পর্যন্ত গ্রন্থটির শতশত সংস্করণ বের হয়েছে। বিগত প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ধরে তার কলম অবিশ্রান্তভাবে লিখেছে মুসলিম ইতিহাসের গৌরদীপ্ত অধ্যায়গুলোর ইতিবৃত্ত। সীরাত থেকে ইতিহাস, ইতিহাস থেকে দর্শন ও সাহিত্য পর্যন্ত সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ। উর্দু থেকে তার আরবী রচনায় যেন অধিকতর অনবদ্য। আল্লামা নদভী জীবনে যেমন পরিশ্রম করেছেন, তেমনি তার শ্বীকৃতিও পেয়েছেন। মুসলিম বিশ্বের নোবেল হিসেবে খ্যাত বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুবাইয়ে তিনি বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে আলী নদভীকে সুলতান ব্রুনাই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সদস্য ছিলেন। তিনি একাধারে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি ছিলেন। লাখনৌর বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুলউলুম নাদওয়াতুল-উলামা' এর রেকটর ও ভারতীয় মুসলনমানদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম মুসলিম পারসোন্যাল ল' বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। ইসলামের এই মহান সংস্কারক ১৯৯৯ সনের ৩১ ডিসেম্বর জুমার আগে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতরত অবস্থায় ইন্তিকাল করেন।