পটুয়াখালী নামে প্রাচীন এ জনপদটি সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার বহন করলেও ইতিহাস চেতনার অভাব ও প্রকৃতিগত বৈরিতার কারণে আজ তা বিলুপ্তপ্রায়। জাতির পথপ্রদর্শক হলো ইতিহাস। বিভিন্ন অঞ্চলের ইতিহাস নিয়ে সৃষ্টি হয় একটি জাতির ইতিহাস। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাস সৃষ্টিতে পটুয়াখালীরও অনবদ্য ভূমিকা রয়েছে, তবে তা যথাযথভাবে উদঘাটন হয়নি। দেশ-বিভাগের পূর্বে দেশীয় ঐতিহাসিক-গবেষক কর্তৃক যেসব ইতিহাস রচিত হয়েছে তা বৃহত্তর বাকরগঞ্জ, বরিশাল কিংবা চন্দ্রদ্বীপ-বাকলা নিয়ে। এসব রচনা সমৃদ্ধশালী হলেও আঞ্চলিক ইতিহাস সৃষ্টিতে যথেষ্ট নয়। এ উপমহাদেশে যাঁরা যুগ-যুগ ধরে উপনিবেশ স্থাপন করে শাসনকার্য পরিচালনা করে গেছেন তাঁরাও তাঁদের প্রশাসনিক প্রয়োজন ছাড়া বিশেষ কিছু লিপিবদ্ধ করেননি। তাছাড়া দেশ-বিভাজনের পর থেকে অদ্যাবধি সুদীর্ঘ এই পঞ্চাশ-ষাট বছরে আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো কাজ হয়নি। 'পটুয়াখালী জেলার ইতিহাস' নামক এ গ্রন্থে ক্রমান্বয়ে এসেছে এ জেলার প্রাচীন আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস। জেলার ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থান সম্পর্কিত অধ্যায়টিতে দেখানো হয়েছে ভৌগোলিক অবস্থান, আয়তন নদনদী জলবায় আবহাওয়া ইত্যাদির তারসা।
সিকদার আবুল বাশারের জন্ম ১৯৬৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর। ঝালকাঠি সদর উপজেলার তারুলি গ্রামে। বাবা আবদুস সামাদ শিকদার, মা সৈয়দা আশ্রাফুন নেছা। তাঁর দাদা তাহসিন উদ্দিন শিকদার মাতৃভাষা বাংলা ছাড়াও আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষায় বিশেষ পারদর্শিতা ও ন্যায়বিচারের জন্য মুন্সিমিঞা খেতাবপ্রাপ্ত। প্রকাশনাশিল্প, প্রচ্ছদ অংকন ও গবেষণাকর্মে সিকদার আবুল বাশার-এর খ্যাতি সর্বজনবিদিত। এই অঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১২ সালে জাতীয় কবিতা পরিষদ, বরিশাল শাখা তাকে সংবর্ধনা দেয়। ঐতিহ্যবাহী চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ ৩৫ বর্ষপূর্তি উৎসব-এ আঞ্চলিক ইতিহাস ও যুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রকাশনায় অবদান। রাখার জন্য তাকে সম্মাননা প্রদান করে। ২০১৫ সালে সিলেট থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নকশী বাংলা এবং অবিরাম উন্নয়ন সংস্থা, নাটোর তাঁকে সংবর্ধনা দেয়। তিনি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক একাডেমি পদক ১৪২৪ লাভ করেন। ২০১৭ সালে পাবনার শিল্প সাহিত্য বিষয়ক পত্রিকা প্রতিভা তাঁকে সংবর্ধনা দেয় ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সােসাইটি পরিচালিত জেলাউপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রকল্পে গবেষণা-সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন । ঝালকাঠি জেলার ইতিহাস ও পটুয়াখালী জেলার ইতিহাস তাঁর অক্লান্ত গবেষণার ফসল। তিনি যৌথভাবে বৃহত্তর বাকরগঞ্জের ইতিহাস গ্রন্থ সংকলন করেন। বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস গ্রন্থসহ ৬৪ জেলার মুক্তিযুদ্ধের। ইতিহাস, আঞ্চলিক ইতিহাস ঐতিহ্য বিষয়ক গ্রন্থসমূহ প্রকাশনায় তাঁর ভূমিকা পথিকৃতের। এইচ. বেভারেজ বি.সি.এস-এর দি ডিস্ট্রিক্ট অব বাকেরগঞ্জ : ইটস হিস্টরি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকস গ্রন্থের অনুবাদক হিসেবে নন্দিত। ছােটদের জ্ঞান-বিজ্ঞান বিষয়ক অনেকগুলাে গ্রন্থের রচয়িতা। পরপর দুইবার (২০১১-'১৪ ও ২০১৪-'১৬) বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির ভােটের মাধ্যমে নির্বাচিত অন্যতম পরিচালক ও বাংলা একাডেমির সদস্য। ভ্রমণ করেছেন আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও ভারত।