রশীদ করীম (১৯২৫-২০১১) বাংলাদেশের অগ্রগণ্য কথাসাহিত্যিক, সৃজনে ছিলেন আজীবন নিমজ্জিত, বৃহত্তর পটভূমিকায় জীবনোপলব্ধি ও বড় ক্যানভাসে রূপায়ন ছিল অভীষ্ট। সাহিত্যাঙ্গণে তাঁর প্রবেশ ১৯৬১ সালে, কিছুটা পরিণত বয়সে, 'উত্তম পুরুষ' উপন্যাসের প্রকাশ চমকিত ও মুগ্ধ করেছিল সাহিত্যপ্রেমীদের। দেশভাগের আলোড়নময় সন্ধিক্ষণে হিন্দু- মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের অগ্রবর্তী অংশের আশা-আকাক্সক্ষা, স্বার্থ-দ্বন্দ্ব-সীমাবদ্ধতার মানবিক রূপায়ন সমকালীন সাহিত্যে যোগ করেছিল নতুন মাত্রা। স্বাধীন বাংলাদেশে সৃষ্টির প্রেরণায় উজ্জীবীত লেখক একে এক আমাদের উপহার দিলেন স্মরণীয় বিভিন্ন উপন্যাস ও গল্প। আরো লিখেছেন চিন্তাশীল প্রবন্ধ এবং সংক্ষিপ্ত এক জীবনকথা। তাঁর রচনায় বিশ শতকের বাঙালি জীবন, বিশেষভাবে জায়মান মুসলিম মধ্যবিত্তের স্বপ্ন, বাসনা ও সংগ্রামের রূপ-রূপান্তর খুঁজে পাওয়া যায় ব্যক্তির অবস্থান ও মানব-মানবীর প্রেম-অপ্রেম জীবন-সংগ্রামের দোলাচলে। একদিকে বিশাল সামাজিক অভিঘাত, অন্যদিকে মানবমনের গহিনের সুলুক-সন্ধান, উভয়ের সম্মিলন রশীদ করীমের রচনাকে দিয়েছে অনন্যতা। জন্মশতবর্ষে তাই রশীদ করীমের সাহিত্যসৃষ্টির পরিচয় দুই মলাটের মধ্যে ধারণের অভিপ্রায় নিয়ে নিবেদিত হয়েছে 'রশীদ করীম অমনিবাস'।
আশা করা যায় আজকের প্রজন্মের সাহিত্যানুরাগী পাঠকের কাছে তাঁর সৃজনসম্ভার নতুন তাৎপর্য ও আবেদন নিয়ে উদ্ভাসিত হবে, পাঠকচিত্ত করবে আলোড়িত, যোগাবে সাহিত্যপাঠের আনন্দ।
জন্ম : কলকাতা, ১৪ আগস্ট ১৯২৫। শিক্ষা : সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ও ইসলামিয়া কলেজ, কলকাতা। পেশা : চাকরি। জেনারেল ম্যানেজার (অবসরপ্রাপ্ত), মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড। প্রকাশিত গ্রন্থ : উপন্যাস : উত্তম পুরুষ; আমার যত গ্লানি; প্রসন্ন পাষাণ; প্রেম একটি লাল গােলাপ; সাধারণ লােকের কাহিনী; একালের রূপকথা; শ্যামা; বড়ই নিঃসঙ্গ; মায়ের কাছে। যাচ্ছি; চিনি না; পদতলে রক্ত; লাঞ্চ বক্স । গল্প : প্রথম প্রেম। প্রবন্ধ : আর এক দৃষ্টিকোণ; অতীত হয় নৃতন পুনরায়; মনের গহনে তােমার মুরতিখানি।। স্মৃতিকথা : জীবন-মরণ । পুরস্কার : আদমজী পুরস্কার (১৯৬১); বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭২); একুশে পদক (১৯৮৪); লেখিকা সংঘ পুরস্কার (১৯৯১); জনকণ্ঠ গুণীজন সম্মাননা (২০০১); কাজী। মাহবুবউল্লাহ-জেবুন্নেসা ট্রাস্ট পুরস্কার (২০০২)। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি সওগাত, মােহাম্মদী, পূর্বাশা, নবযুগ, মিল্লাত প্রভৃতি পত্রিকায় গল্প লিখে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এই সময় তিনি অল-ইন্ডিয়া রেডিও’র কলকাতা। কেন্দ্র থেকে নিয়মিত গল্প ও কথিকা প্রচার করতেন । ১৯৪৫ সালের দিকে এসে লেখালেখি ছেড়ে দেন এবং ১৯৬১ সালে পুনরায় শুরু করেন। প্রথম উপন্যাস 'উত্তম পুরুষ লিখেই আদমজী। পুরস্কার লাভ করেন। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধকে অবলম্বন করে আমার যত গ্লানি (১৯৭৩) উপন্যাস রচনা করেন । লিখেছেন অনেক তাৎপর্যময় প্রবন্ধ এবং স্মরণীয় গুটিকয় গল্প । ১৯৯২ সাল থেকে অসুস্থ হয়ে গৃহবন্দি জীবনযাপন করছেন। আবার রুদ্ধ হয়ে গেছে তার ক্ষুরধার কলম।