রুবিকস কিউব সারা বিশ্বজুড়ে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও চমৎকার পাজল, খাঁটি বাংলায় বলতে পারি যান্ত্রিক ধাঁধা। এই পাজলের উদ্ভাবক আর্নো রুবিক, তাঁর নাম থেকেই রুবিকস কিউব নামকরণ করা হয়। রুবিকস কিউব শুধু একটি ধাঁধা বা খেলনা নয়, বরং একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও ধৈর্যের পরীক্ষা নেয়ার একটা রঙিন মাধ্যম। এই কিউব মানুষকে চিরন্তন সমস্যা সমাধানের গভীরতা বুঝতে সাহায্য করে। কিউবের প্রতিটি কর্নার ও ব্লকের রং পরিবর্তনের মাধ্যমে জীবন্ত হয়ে ওঠে এই যান্ত্রিক ধাঁধা। রুবিকস কিউব যেন আমাদের জীবনকে প্রতিফলিত করে, জীবনেরও প্রতিটি মুহূর্তে পরিবর্তন আসে, নানা ধরনের সমস্যার মোকাবেলা করতে হয় আমাদের। এ প্রসঙ্গে আর্নো রুবিকের ভাষ্য, রুবিকস কিউব যেন মানব জীবনের প্রতিচ্ছবি— যেখানে এলোমেলো পরিস্থিতি থেকে শৃঙ্খলতা খুঁজে পাওয়ার চ্যালেঞ্জ আছে।
রুবিকস কিউব সমাধান করতে যেমন ধৈর্য ও কৌশল প্রয়োজন, তেমনি জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে প্রয়োজন স্থিতিশীল মনোভাব ও যুক্তিসংগত চিন্তা। প্রথমে একটি কিউব হাতে নেওয়ার সময়, তা শুধু এলোমেলো রঙের একটি বস্তুর মত মনে হয়। ধীরে ধীরে প্রতিটি রং আর সব দিক সঠিকভাবে মেলানোর মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছে যাই আমরা। আমাদের জীবন আসলেই রুবিকস কিউবের মতো, একদিকে সমস্যা ঠিক করতে গেলে অন্যদিকটা আরও জটিল হয়ে যায়। জীবনে প্রতিদিন আমরা একসঙ্গে একাধিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি, তেমনি কিউবের প্রতিটি লেয়ার বা স্তরের সমাধানও কিন্তু পরবর্তী স্তরের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিউব সমাধান মানে কেবল একটি সমস্যা সমাধান নয়, বরং প্রতিটি সমস্যাকে একসঙ্গে সমাধানের মাধ্যমে একটি সুশৃঙ্খল রূপে নিয়ে আসা।
আমি মনে করি, সাধারণভাবে রুবিকস কিউব কেবল একটা খেলনা নয়। এই কিউব ধৈর্য, ফোকাস আর চিন্তাশক্তির পরীক্ষা নিচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। যারা রুবিকস কিউব মেলাতে পারে তারা বিশ্বাস করেন, রুবিকস কিউব কেবল খেলনা হিসেবেই সীমাবদ্ধ নয়-বরং এটি মানুষের মস্তিষ্কের যৌক্তিক ক্ষমতাকে পরীক্ষা করে। কিউব সমাধান করার সময়, একজন ব্যক্তি তার মস্তিষ্ককে সর্বোচ্চ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজে লাগায়।
অনেক সময় কিউব সমাধানের চেষ্টা করতে গিয়ে একবারে সাফল্য পাওয়া যায় না। তবে, প্রতিটি ব্যর্থতা থেকে শেখা যায় কীভাবে পরের বার আরও ভালো করে সমাধান করা যায়। প্রথমে রুবিকস কিউব অসম্ভব মনে হলেও ধৈর্য আর অনুশীলনের মাধ্যমে তা মেলানো সম্ভব। জীবন যেমন চলমান, তেমনি রুবিকস কিউব মেলানোর প্রতিটি মুহূর্তে একটি নতুন পরিস্থিতি তৈরি করে, যা মোকাবিলা করার জন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হয়।
রুবিকস কিউব শুধু একটি যুক্তি নির্ভর পাজল নয়, এখানে সৃজনশীল চিন্তার মিশ্রণ দেখা যায়। কিউব সমাধান মানে আসলে নিজের মস্তিষ্কের সঙ্গে চ্যালেঞ্জে নামার মত অবস্থা। কিউব সমাধানের সময়, একজন ব্যক্তি তার মস্তিষ্কের প্রতিটি দিককে ব্যবহার করে বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করে। এমন ধরনের সমস্যা সমাধান করতে সৃজনশীল চিন্তাশক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
একাধিক পদ্ধতি ব্যবহার করে কিউব সমাধান করা যায়। রুবিকস কিউবের মতো ধাঁধার মাধ্যমে আমাদের সৃজনশীল চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটে। প্রতিদিন কিউব মেলানোর মাধ্যমে আমরা নতুন নতুন কৌশল শিখতে পারি, যা আমাদের সাধারণ জীবনের সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে।
বইটি প্রকাশনার জন্য বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সমন্বয়কারী বায়েজিদ ভূঁইয়া জুয়েল ও বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ-এর নিকট কৃতজ্ঞ। এছাড়াও বইটি লেখার সময় ইন্টারনেট ও বিভিন্ন বইপত্র-সংবাদপত্রসহ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর চ্যাটজিপিটি থেকে বিভিন্ন তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করেছি।
ছোটরা প্রতিদিন রুবিকস কিউব মেলাতে থাকো, আর নিজের চিন্তাশক্তিকে নতুন করে বিকশিত করো। আর বড়রা কাজের ফাঁকে, মনের যত্নের জন্য-মনের গতি বাড়াতে হাতে তুলে নিন রুবিকস কিউব।
জাহিদ হোসাইন খান
ঢাকা, বাংলাদেশ
৫ জানুয়ারি ২০২৫