কাব্যগ্রন্থ “স্বার্থের বোঝাপড়া” আমাদের পরিচয় করায় ঐন্দ্রিলা দত্তের কবিতার এক অনন্য জগতের সঙ্গে। পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে তিনি যেমন যুক্তি ও বিশ্লেষণের গভীরে মগ্ন, তেমনই তাঁর কবিতা পাঠককে টেনে নিয়ে যায় অনুভূতির গভীরে, যেখানে প্রেম, দ্রোহ, প্রকৃতি, পার্থিব অপূর্ণতা এবং পরকালীন রহস্যময়তা মিশে যায় এক অভিন্ন স্রোতে।
ঐন্দ্রিলা দত্তের কবিতায় রয়েছে এক অমলিন কৌতুহল, যা বাস্তবতার স্তর ছুঁয়ে পরাবাস্তবতার দিকে এগিয়ে যায়। তাঁর প্রতিটি শব্দ যেন একটি নতুন দিগন্তের সন্ধান দেয়, যেখানে পৃথিবীর অমোঘ নিয়ম ও মানবিক অনুভূতির অনির্বাণ লড়াই চলতে থাকে।
তাঁর কবিতার ভাষা সরল, কিন্তু তার মধ্যে রয়েছে এক গভীর চিন্তা এবং অনুভূতির স্রোত, যা পাঠককে নাড়িয়ে দেয়। প্রেমের কোমলতা থেকে দ্রোহের শক্তিশালী শেকড় পর্যন্ত তাঁর কবিতা বিচরণ করে, মানব মনের অদেখা কোণগুলোকে উন্মোচন করে।
প্রকৃতির প্রতি তাঁর ভালোবাসা এবং তার অন্তর্নিহিত রহস্যের প্রতি আকর্ষণ কবিতায় এক অনন্য রূপে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি যেমন বাস্তবের কঠিন সত্যের মুখোমুখি, তেমনই তিনি পরকাল ও আধ্যাত্মিকতার প্রতি গভীর আগ্রহী, যা তাঁর কবিতায় এক রহস্যময় আভা ছড়ায়।
এটি শুধু একজন কবির অভ্যন্তরীণ লড়াই কিংবা স্বপ্নের কাহিনি নয়, বরং একটি দর্শন, একটি দৃষ্টিকোণÑ যেখানে মানুষ তার অস্তিত্বের অর্থ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে, যেখানে প্রেম এবং দ্রোহের মাঝে একজন মানুষের আত্মবোধ জন্ম নেয়।
এ কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতায় ঐন্দ্রিলা’র নিজস্ব তত্ত্ব, বিশ্বাস ও জীবনবোধের পরিসর মানবিক অন্তর্দৃষ্টি ও অনুভূতির এক গভীরতার দিকে এগিয়ে গেছে। একদিকে যেমন তিনি প্রকৃতির রহস্যের দিকে দৃষ্টি দেন, তেমনই তিনি মানবজীবনের অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন।
এই কাব্যগ্রন্থটি একটি যাত্রা- যাত্রা এক চিরন্তন সন্ধানের, যেখানে প্রেম, দ্রোহ, প্রকৃতি, অপ্রাপ্তি, এবং পরকালীন চিন্তা একসঙ্গে মিশে থাকে। এই বইটি সেই পাঠকদের জন্য, যারা জীবনের গভীর প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজতে চান এবং যারা বিশ্বাস করেন যে কবিতা কেবলমাত্র শিল্প নয়, বরং একটি জীবনদর্শন।
আসন্ন বইমেলা ২০২৫-এ “স্বার্থের বোঝাপড়া” প্রকাশের মাধ্যমে ঐন্দ্রিলা দত্ত তাঁর কাব্যচর্চা দিয়ে পাঠকদের হৃদয়ে একটি স্থায়ী ছাপ রেখে যাবেন- একটি বোধের মেলবন্ধন, যা অমলিন এবং অনন্ত।
মোহাম্মদ ওমর ফারুক
সহকারী অধ্যাপক,
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,
কক্সবাজার সিটি কলেজ।