এ বইটি প্রখ্যাত গবেষকদের লেখা প্রায় ৪০টি প্রবন্ধ নিয়ে সম্পাদিত একটি রচনা । এখানে বিশাল ক্যানভাসে স্থান পেয়েছে রুশ ইউক্রেন যুদ্ধ, তার কারন; প্যালেস্টাইন জনগনের বিরুদ্ধে ইসরাইলের গনহত্যা; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবিবেচিত পররাষ্ট্র নীতির চুলচেরা বিশ্লেষণ । পুনরিজ্জিবিত রাশিয়া আর চীনের পরাশক্তিগত মর্যাদার প্রভাবে বিশ্ব রাজনীতির গতিধারায় সুচিত পরিবর্তন, সেই পরিবর্তনকে বাঁধাগ্রস্ত করার মার্কিনী তৎপরতা, পূর্ব এশিয়ায় আগ্রাসী ন্যাটোর পাখা বিস্তারের কুটিল প্ররোচনা আর চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের হুংকার – সব মিলিয়ে বইটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জগতে এক নতুন সংযোজন ।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। ইসরাইল গাজায় গণহত্যা শুরু করে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর। এই দুই ঘটনা প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত নয়। কিন্তু এই দুইয়ের মধ্যে একটা ইঙ্গিত আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক অবক্ষয়ের। পরাশক্তি হিসেবে তার পতনের আভাসও সেখানে রয়েছে বলে ধারণা করি। মার্কিন প্রতিপত্তির মূলে রয়েছে মার্কিন ডলারের একচ্ছত্র আধিপত্য।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আমেরিকার নেতৃত্বে এই ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ডলারকরণ করা সম্ভব হয়। ডলারের শক্তি প্রয়োগ করে আমেরিকা তার স্বার্থ উদ্ধারের লক্ষে নানা দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মার্কিন ডলারের আধিপত্য খর্ব করার লক্ষ্যে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ আজ তৎপর। বহুকাল ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে বিভিনড়ব দেশে এবং অঞ্চলে তার প্রভাব এবং প্রতিপত্তি টিকিয়ে রেখেছিল। অথচ একই সাথে ফ্যাসিবাদী শক্তির সাথে আঁতাত করে সে চিলি, গুয়েতেমালা, ইউক্রেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার প্রভাব অক্ষুণড়বড়ব রাখতে কুণ্ঠা বোধ করেনি। এই দ্বিমুখীনতা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে আজ অনেক বেশি স্বচ্ছ। আজ উভয় কৌশল প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে, তার স্থলে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে নতুন মডেল হিসেবে একে অপরের প্রতি সহযোগিতার নীতি।
বিশ্ব রাজনীতিতে এই পরিবর্তন যতটুকু না চমকপ্রদ, ঠিক ততটুকুই দেখি তাকে গ্রহণ করে নেওয়ার তাড়না। সেই তাড়না থেকে এই বইটি প্রকাশ করা হলো। এখানে মোট উনচল্লিশটি প্রবন্ধ আছে যেগুলি এলাকাভিত্তিক মানদন্ড ব্যবহার করে পাঁচটি অংশে সাজানো হয়েছে। এর সাথে রয়েছে বিশ্ব রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তনের ধারার ওপর বাড়তি একটি অংশ। ইংরেজিতে প্রকাশিত এই প্রবন্ধগুলি অনুবাদ করেছেন বিশিষ্ট গুণীজনেরা। তাঁদের প্রতি রইল আমার অকুণ্ঠ ভালোবাসা এবং ধন্যবাদ। আশা করি বইটি আপনাদের কাছে সুপাঠ্য হবে।
জন্ম ১৯৫২ সালে, যশোরে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এমএ এবং মস্কো রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজতত্ত্বে পিএইচডি। ছাত্রজীবনে প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগে শিক্ষকতায় যোগ দেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন ১৯৮৮ সালে। ১৯৯৪ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় অধ্যাপনা করছেন। পড়িয়েছেন ম্যাকোয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ও সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন অধ্যাপক। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ-বিশ্বায়ন: ইতিহাস ও গতিধারা; গণতন্ত্রের বিশ্বরূপ ও বাংলাদেশ; সংঘাতময় বাংলাদেশ: অতীত থেকে বর্তমান; মাও সে তুং: চীনের দুঃখ; পুঁজিবাদের সমাজতত্ত্ব (সম্পাদিত); সমাজতত্ত্ব সংকট ও সম্ভাবনার দেড়শ বছর, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙল কেন; কেন পুনরায় মার্কস; ইরান: হোমেনির ইসলামী বিপ্লব ও তারপর প্রভৃতি।