আলহামদুলিল্লাহ। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার মহান বিপ্লব নিয়ে রচিত হয়েছে 'ছাত্র জনতার চব্বিশের বিপ্লব'। বাংলাদেশের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় চব্বিশের জুলাই-আগষ্ট বিপ্লব। যার শুরু 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন'র কোটা সংস্কার দাবিকে কেন্দ্র করে। কিন্তু এটি শুধু একটি দাবি পূরণের আন্দোলন ছিল না। এটি ছিল জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি ঐতিহাসিক বিপ্লব। যে বিপ্লব আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে কিভাবে পুরো জাতিকে এক হতে হয়! অন্যায়, অপশাসনের বিরুদ্ধে কিভাবে বীরের মত লড়াই করে, জীবন উৎসর্গ করে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হয়! তাই এই বিপ্লব আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, যা যুগ যুগ ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এক ইতিহাস হয়ে থাকবে। আর শহীদদের বীরোচিত আত্মত্যাগ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য যেকোনো অন্যায়, অপশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার, লড়াই করার প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
জুলাইয়ের শুরুতে ছাত্রদের কোটা সংস্কারের আন্দোলন থেকে যে গণজাগরণের সৃষ্টি এবং তা থেকে জনগণের যে মুক্তির লড়াই শুরু হয়, সেই লড়াইয়ে শামিল হয় সারা দেশের লাখো ছাত্র-জনতাসহ সকল শ্রেণি, পেশার মানুষ। রক্তে রঞ্জিত হয় শহর, নগর, অলিগলি, রাজপথ। সেই লড়াইয়ের শুরু থেকে একের পর এক ধারাবাহিকতা তুলে ধরা হয়েছে এই বইয়ে। তুলে ধরা হয়েছে বিপ্লবে নাম জানা-না জানা অসংখ্য ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণ এবং বীরত্বের কথা; সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ও অবদানের কথা; বিপ্লবে বারুদ হয়ে ওঠা স্লোগান, প্লাকার্ড, পোস্টার, গ্রাফিতি এবং সংগীতের কথা; আন্দোলনে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার; ক'জন বীর শহীদের আত্মত্যাগের কথা; আহতদের চিত্র কিংবা তাদের দুর্বিষহ জীবন-যাপনের কথাসহ নানা প্রসঙ্গ। সেই সঙ্গে সন্নিবেশিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলির সঙ্গে জড়িত অসংখ্য দুর্লভ ছবি। যা বর্ণিত ঘটনাগুলিকে আরও জীবন্ত করে তুলেছে।
অতএব 'ছাত্র জনতার চব্বিশের বিপ্লব' শুধু একটি গ্রন্থই নয়, এটি একটি দালিলিক প্রমাণও বটে। বইটি লিখতে গিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ এবং কখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাহায্য নিয়েছি। বিপ্লবে অংশ নেওয়া আহত কিছু ছাত্রের সঙ্গে কথাও বলেছি, যা লেখার সংশ্লিষ্ট অংশে রেফারেন্স হিসাবে উল্লেখ করেছি। সেই সঙ্গে কাছে থেকে বিপ্লব দেখা এবং সেই সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব থাকা আমি আমার নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছি। তবে এত বড় একটা বিপ্লবের সমগ্র ঘটনা একটা ছোট বইয়ে তুলে আনা কখনোই সম্ভব না। অনেক ঘটনা কিংবা কথা এখানে তুলে ধরতে পেরেছি, আবার অনেক ঘটনা কিংবা কথা এখানে হয়ত তুলে ধরতে পারিনি। সেটা নিজের জানা না থাকার কারণে হোক কিংবা মানুষ হিসেবে নিজের সীমাবদ্ধতার কারণে হোক।
ভুল-ভ্রান্তি পরিহারের ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণে যথেষ্ট সজাগ থেকেছি, শতভাগ নিরপেক্ষেতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। সবশেষে নিজের যথেষ্ট শ্রম, সাধনা দিয়ে বইটি প্রকাশ করতে পেরে নিজেকে আমি একজন সৌভাগ্যবান মনে করছি। বইটি যদি পাঠকের কাছে সমাদৃত হয়, তাহলে আমার পরিশ্রম, লেখা স্বার্থক হবে। পাঠকের গুরত্বপূর্ণ মতামত এবং পরামর্শ নিচে প্রদত্ত ই-মেইলে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।