"মছনবী শরীফ" বইয়ের পেছনের অংশ থেকে নেয়া: মছনবী শরীফের বিষয়বস্তু হল তাসাওউফ বা অধ্যাত্মবাদ। অধ্যাত্ম সাধনার মাধ্যমে কিভাবে মানুষ মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলাকে পেতে পারে, তার মহান দরবারে উপনীত হয়ে ইহপরকালীন সৌভাগ্য লাভ করতে পারে, তাই মাওলানা রুমী (র.) মনের মাধুরী মিশিয়ে সাহিত্য রসে সিক্ত করে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেছেন। অন্যদিকে অধ্যাত্মবাদের নামে যেসব ভণ্ড প্রতারক মানুষের ঈমান হরণ ও পরকাল ধ্বংসের ফাঁদ পেতে বসেছে, তাদের মুখােশ উন্মোচন করেছেন অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে। সুতরাং অন্তদৃষ্টি সহকারে মাওলানা রুমী (র.)-এর সেসব আলােচনা হৃদয়ঙ্গম করলে অধ্যাত্ম সাধনার পথযাত্রীরা ভণ্ড প্রতারকদের জালে ফেঁসে দ্বীন-ঈমান এবং পরকাল বিনষ্টি থেকে সংরক্ষিত থাকবেন বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করা যায়। মছনবী বিশ্ব মানের সাহিত্য। বিশ্ব সাহিত্যের ইতিহাসে যে কয়টি গ্রন্থ নিজের শ্রেষ্ঠত্বের আসন করে নিয়েছে, তন্মধ্যে মছনবী শরীফ শীর্ষস্থান অধিকার করে আছে। এমন একটি গ্রন্থের অনুবাদ কর্ম সহজসাধ্য হওয়ার কথা নয় মােটেও। এতদসত্ত্বেও আমরা এমন একটা দুরূহ কাজে নিজেদের সংশ্লিষ্ট করার দুঃসাহস করেছি। আমরা এ অমর গ্রন্থের অনুবাদকে সর্বপ্রকার প্রমাদমুক্ত রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। কতটুকু সফল হয়েছি তা বিদগ্ধ বােদ্ধা পাঠকদেরই বিচার্য বিষয়। | বােদ্ধা পাঠকদের সমীপে সবিনয় নিবেদন, যদি কোন ভুল-ভ্রান্তি তাদের সন্ধানী দৃষ্টিতে ধরা পড়ে তা হলে আমাদের অবহিত করলে পরবর্তী সংস্করণে তা শােধরানাের প্রয়াস পাব। আল্লাহ আমাদের প্রচেষ্টা কবুল করুন।
জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি (ফার্সি: جلالالدین محمد رومی; ৩০ সেপ্টেম্বর ১২০৭ – ১৭ ডিসেম্বর ১২৭৩), যিনি জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ বালখী, মাওলানা রুমি, মৌলভি রুমি নামে তবে শুধু মাত্র রুমি নামেও পরিচিত, ১৩শ শতাব্দীর একজন ফার্সি[৭][৮] সুন্নি[৯] মুসলিম কবি, আইনজ্ঞ, ইসলামি ব্যক্তিত্ব, ধর্মতাত্ত্বিক, অতীন্দ্রিয়বাদী এবং সুফী ছিলেন।[১০] রুমির প্রভাব দেশের সীমানা এবং জাতিগত পরিমণ্ডল ছাড়িয়ে বিশ্বদরবারে ছড়িয়ে পড়েছে; ফার্সি, তাজাকিস্তানি, তুর্কি, গ্রিক, পশতুন, মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানরা বিগত সাত শতক ধরে বেশ ভালভাবেই তার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারকে যথাযথভাবে সমাদৃত করে আসছে।[১১] তার কবিতা সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং বিভিন্ন ধারায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। রুমিকে যুক্তরাষ্ট্রের “সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি” [১২] এবং “সর্বাধিক বিক্রীত কবি” হিসেবে উল্লেখ করা হয়।[১৩][১৪] রুমির সাহিত্যকর্ম বেশিরভাগই ফার্সি ভাষায় রচিত হলেও তিনি অনেক স্তবক তুর্কি, আরবি এবং গ্রিক ভাষায়ও[১৫][১৬][১৭] রচনা করেছেন। [১৮][১৯] তার লেখা মসনবী-কে ফার্সি ভাষায় লেখা সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হিসেবে গণ্য করা হয়।[২০][২১] বৃহত্তর ইরান এবং বিশ্বের ফার্সি ভাষী জনগোষ্ঠী এখনও তার লেখাগুলো মূল ভাষায় ব্যাপকভাবে পড়ে থাকে।[২২][২৩] অনুবাদসমূহও খুব জনপ্রিয়, বিশেষ করে তুরস্ক, আজারবাইজান, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ এশিয়ায়।[২৪] তার কবিতা ফার্সি সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে, শুধু তাই নয় তুর্কি সাহিত্য, উসমানীয় তুর্কি সাহিত্য, আজারবাইজানি সাহিত্য, পাঞ্জাবের কবিতা, হিন্দী সাহিত্য, উর্দু সাহিত্যকেও অনেক প্রভাবিত করেছে। এছাড়াও অন্যান্য ভাষার সাহিত্য যেমন তুর্কীয়, ইরানীয়, ইন্দো-আর্য, চাগাতাই, পশতু এবং বাংলা সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে। তার জীবনদর্শনের উপর শিবলী নোমানীর রচিত সাওয়ানেহে মাওলানা রূম অন্যতম। নাম