"শব্দার্থে আল কুরআনুল মজীদ ১০ম খণ্ড" বইয়ের ভূমিকাঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বাংলা ভাষায় এ পর্যন্ত পবিত্র কুরআন মজীদের বেশ কয়েকটি সরল অনুবাদ ও তাফসীর প্রকাশিত হয়েছে। এসব অনুবাদ ও তাফসীরের মাধ্যমে পবিত্র কুরআনের মৌলিক শিক্ষা জানা অনেকাংশে সহজ হয়েছে। তবে যারা দীনি মাদ্রাসায় প্রাথমিক পর্যায়ে অধ্যয়ন করেছেন অথবা ইংরেজি শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও দীনের দায়ী হিসেবে আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে দীনের দাওয়াত পৌছে দিচ্ছেন তাদের জন্য সরাসরি আরবি শব্দ বুঝে পবিত্র কুরআনের ভাবার্থ অনুধাবন করার মতাে তরজমার অভাব রয়েছে। এদিকে লক্ষ্য রেখে আজ হতে প্রায় ১৫ বছর পূর্বে পবিত্র কুরআনের শাব্দিক তরজমার কাজ শুরু করি। প্রায় ১৪ বছরের মেহনতের পর মহান আল্লাহ তৌফিক দিয়েছেন এ কাজ সম্পূর্ণ করার। এ কাজে সব থেকে বেশী সহায়তা পেয়েছি আমার কর্মজীবনের শ্রদ্ধেয় সহকর্মী মুহাদ্দিস ও মুফাসসিরগণের; যারা আল-আজহার, দামে, খার্তুম, পবিত্র মক্কা ও মদীনা শরীফের বিশ্ববিদ্যালয়গুলােতে পড়াশােনা করেছেন। মহান আল্লাহ তাদেরকে যথাযােগ্য প্রতিফল দিন। যেসব তাফসীর ও তরজমার সহযােগিতা নিয়েছি তার মধ্যে রয়েছে, মিশরের প্রখ্যাত মুফাসসির মুফতী হাসানাইন মাখলুফের ‘কালিমাতুল কুরআন, তাফসীরে জালালাইন, তাফসীরে ইবনে কাসীর, সাফাওয়াতুত তাফসীর, মা'আরেফুল কুরআন, তাফসীরে আশরাফী, শায়খুল হিন্দ হযরত মাওলানা মাহমুদুল হাসান ও শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা শাব্বির আহমদ ওসমানীর তাফসীর ও তরজমায়ে কুরআন। মূলতঃ পবিত্র কুরআনের শাব্দিক তরজমা করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি হযরত মাওলানা শাহ রফিউদ্দিন সাহেবের উর্দু শাব্দিক তরজমা পড়ে। আমার এ তরজমার মূল অবলম্বন তার এ বিখ্যাত শাব্দিক তরজমা। এছাড়া মক্কা শরীফের উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ভূতপূর্ব অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আব্বাস নদভীর Vocabulary of the Holy Quran, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মুহসীন খানের Interpretation of the Meanings of the Noble Quran এতে তাবারী, ইবনে কাসীর ও আল কুরতুবীর সার সংক্ষেপ রয়েছে। অধ্যাপক ইউসুফ আলীর The Quran Translation and Commentry এ তরজমার ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে কাজ করেছে। তবে শাব্দিক তরজমা দ্বারা অনেক সময় পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলাের বক্তব্য অনুধাবন সম্ভব নয়। তাই শব্দার্থের সাথে প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী র.-এর তরজমায়ে কুরআন মজীদ হতে সূরার নামকরণ, শানে নুযূল, বিষয়বস্তু, ভাবার্থ ও টিকা সংযােগ করেছি, যাতে মর্মার্থ বুঝতে অসুবিধা না হয়। | শব্দার্থ থেকে ভাবার্থ অনুধাবনের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন : (১) কোনাে কোনাে শব্দের এক জায়গায় এক অর্থ, অন্য জায়গায় অন্য অর্থ করা হয়েছে। স্থান ও প্রসঙ্গভেদে অর্থের এ বিভিন্নতা হতে পারে। অনেক সময় ঐ শব্দের আগে বা পরে কিছু সহকারী শব্দ আসার কারণেও এ পরিবর্তন আসতে পারে।(২) কোনাে কোনাে আরবি শব্দের নিচে আদৌ কোনাে বাংলা অর্থ নেই। অনেক সময় এ ধরনের শব্দ বাক্য গঠনের পূর্বে ব্যবহার করা হয়, এর কোনাে পৃথক অর্থ থাকে না। পুরাে বাক্যের উপরই এর অর্থ প্রকাশ পায়। (৩) যেসব ক্ষেত্রে দুটি আরবি শব্দ মিলে একটি বাংলা শব্দ হয়েছে সেখানে আরবি শব্দ দুটোর নিচে মাঝখানে বাংলা প্রতিশব্দটি সেট করা হয়েছে। (৪) কোনাে শব্দের নিচে বা আগে-পরে বাংলা শব্দ দেয়ার পর বন্ধনীর মধ্যে আরও কিছু শব্দ যােগ করা হয়েছে যাতে অর্থটি আরাে স্পষ্ট হয়ে যায়। (৫) পবিত্র কুরআনে আখিরাতের বিশেষ ঘটনা বর্ণনার ক্ষেত্রে অতীতকাল ব্যবহার করা হয়েছে এগুলাে এমন, যেন ঘটনাটি ঘটেই গিয়েছে, এতে আর কোনাে সন্দেহের অবকাশ নেই। এভাবে আখিরাতে ভবিষ্যতে যা ঘটবে এমন কিছু কিছু বিষয়ে পবিত্র কুরআনে ক্রিয়ার অতীতকাল ব্যবহার হলেও তরজমায় ভবিষ্যতকাল (অর্থাৎ এমন ঘটবেই) ব্যবহার করা হয়েছে। মােট কথা হলাে, পবিত্র কুরআনের অর্থ শিক্ষার ক্ষেত্রে শব্দার্থের সাথে মর্মার্থ অবশ্যই পড়তে হবে। এছাড়া সূরার নামকরণ, শানে নুযূল ঐতিহাসিক পটভূমিকা ও বিষয়বস্তু পড়ার পর পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলাে অর্থসহ অধ্যয়ন করতে হবে। এভাবে কমপক্ষে দু-তিন পারা বুঝে পড়তে পারলে অন্যান্য অংশের অর্থ অনুধাবন করা সহজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। এরপরও গভীরভাবে কুরআন মজীদ অনুশীলনের জন্য কোনাে নির্ভরযােগ্য তাফসীরের সাহায্য নেয়া প্রয়ােজন। তবে পবিত্র কুরআন অনুশীলনের জন্য সবচেয়ে বড়াে প্রয়ােজন হলাে বাস্তব ময়দানে দীনের দাওয়াত পেশ ও নিজের জীবনে তা বাস্তবায়ন করা। এভাবেই পবিত্র কুরআনের মর্মার্থ তার অনুশীলনকারীর সামনে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এর তৌফিক দান করুন। সর্বশেষে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে সীমাহীন শুকরিয়া আদায় করছি, যিনি আমাকে এ কাজের তৌফিক দান করেছেন। এতে যা কিছু অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি হয়েছে তার জন্য তাঁরই কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আর এ প্রচেষ্টাকে তিনি যেন আমার নাজাতের অসিলা বানান এ দোয়াই করছি। মতিউর রহমান খান রবিউল আউয়াল-১৪১৮ হিঃ জেদ্দা আগস্ট-১৯৯৭ ইং শ্রাবণ-১৪০৪ বাংলা