ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা প্রাচীন ভারতের পূর্ব-প্রান্তীয় কিছু জনপদের ইতিহাস-অনুমিত জীবনালেখ্যই প্রান্ত-প্রাচীন উপন্যাসের মূল-উপজীব্য। সপ্তম শতাব্দীর ত্রিশের দশকের শেষের দিকের প্রাক-মাৎস্যন্যায় সময়টি উপন্যাস বলা চলে। এতে ইতিহাসকে আশ্রয় করা হয়েছে। ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর অভিঘাত আছে, সে-সব অভিঘাতে জনজীবনের ওপর সৃষ্ট প্রভাবের চিত্র আছে। তবে রাজা-রাজপুরুষ-রাজদরবার বা রাজঅন্তপুরের ধারাবাহিক জীবনের বর্ণনা অনুপস্থিত। কিছু ঐতিহাসিক চরিত্র আছে যেগুলি রাজদরবারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়, একমাত্র শশাঙ্ক-পুত্র মানব ছাড়া। ইতিহাসে মানবের চরিত্রটি অর্ধনিণীত। তাঁর ওপর কিছু কল্পনা আরোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে আমাদের প্রাচীন ইতিহাসে যারা উপেক্ষিত সেই সাধারণ মানুষ, সম্ভবনাময় মানুষ, সৃজনশীল মানুষ, অনুসন্ধিৎসু-দ্রোহী মানুষই প্রান্ত-প্রাচীন-এর প্রধান অবলম্বন। মহামতি এ্যারিস্টটল বলেছেন, ‘ইতিহাসে সন তারিখ ছাড়া আর কোনো চিরন্তর মানব সত্য নেই। অন্যদিকে সাহিত্যে সন তারিখ ছাড়া সবই সত্য। এ সত্যের অর্থ সাহিত্যের সত্য, বাস্তবকে অবলম্বন করলেও বাস্তবকে অতিক্রম করে যায়।’ সাহিত্যের সত্যই এই উপন্যাসের প্রেরণার তালপুকুর।
লেখক-নাট্যকার আহমেদ মুসার জন্ম ১৯৫৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি, নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার ইজারকান্দি গ্রামে। মানুষের প্রতি তাঁর দরদ অপরিসীম এবং সেই সূত্রেই স্কুল-দাম্ভিক অপ-মানুষদের অবজ্ঞা করার মহার্ঘ বিলাসিতা করতে গিয়ে তাকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। জীবনে সেই কবে, পেছনে ফেলে এসেছেন কাশবন দোলানাে দুঃখী-গ্রাম, ধুধু বালুর চর, ঘুঘু ডাকা বিষন্ন দুপুর আর রূপান্তরহীন জীবন। বস্তুত এগুলােই তার সৃষ্টিশীল প্রেরণার তালপুকুর। রাজনৈতিক-হত্যাকাণ্ড-বিরােধী কয়েকটি সাড়া জাগানাে গ্রন্থ লিখেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কিত গবেষণাসহ আরাে কিছু সমীক্ষা-ধর্মী গ্রন্থও তার রয়েছে। কিন্তু গল্পউপন্যাস তাঁর আদি ঠিকানা। তিনি আবার ফিরে এসেছেন শেকড়ে পানি ঢালতে। তার চারটি উপন্যাস এক মলাটে প্রকাশিত হয়েছে। তার গল্পগ্রন্থ উজান চর, ভাটির চর পাঠকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। তার মঞ্চ নাটক হবু চন্দ্র সমাচার সমকালের হাসির মৌলিক নাটকের অন্যতম একটি। দীর্ঘ দিন ধরে একটানা মঞ্চস্থ হয়ে আসছে। তার মঞ্চ নাটক হবু চন্দ্র সমাচার সমকালের হাসির মৌলিক নাটকের অন্যতম একটি। দীর্ঘ দিন ধরে একটানা মঞ্চস্থ হয়ে আসছে। তার মঞ্চ নাটক এক যে ছিল অকাল, নাদের আলীর সাহিত্য সম্মেলন, পথনাটক আহা বেশ বেশ বেশ এবং কয়েকটি টিভি ধারাবাহিক ও একক নাটক নাট্যাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছে। বিশেষ করে তাঁর লেখা একক নাটক চান মিয়ার নেগেটিভ-পজেটিভ এক যুগ পরেও দর্শক এবং নাট্যকর্মীদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল রয়েছে। তার কয়েকটি মঞ্চনাটক, পথ নাটক ও একক অভিনয় নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে মঞ্চনাটক সমগ্র। গাঁও গেরামের ছড়া, ছােটদের ফকির মজনু শাহ, শিশু-কিশােরদের মঞ্চ নাটক কবি রাজার দেশে প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। তাঁর লেখা প্রবন্ধনিবন্ধ এবং তার গ্রহণ করা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিয়ে আরাে দুটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের সৃজনশীল সাহিত্যাঙ্গনে আবার তিনি আসন করে নিতে পারবেন বলে দৃঢ় বিশ্বাস। ছিচল্লিশ বছরের জীবনে বহু এবং বিচিত্র ধরনের পেশায় তিনি নিয়ােজিত থাকলেও সবচেয়ে স্থিতু সাংবাদিকতায়। বর্তমানে বাংলাদেশ লােক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক। আহমেদ মুসা প্রথাগত শিক্ষা শেষ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়ে বিভিন্ন সূত্রে সারা বাংলাদেশ ঘুরেছেন অনুসন্ধানী দৃষ্টি নিয়ে।