“ভাষা আন্দোলন" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ ভাষা আন্দোলনের প্রথাসিদ্ধ দীর্ঘ ইতিহাস কয়েকজনের হাতেই লেখা হয়েছে। সেগুলাে তথ্যনিষ্ঠ। তা ছাড়া একই বিষয়ে লেখা স্মৃতিচারণামূলক বই সংখ্যায় অনেক। দুঃখজনক যে সেসব বইয়ে অনেক ক্ষেত্রে রয়েছে তথ্যগত ভুল, যা ইতিহাসপাঠকের জন্য বিভ্রান্তি ও অস্বস্তির কারণ হওয়ার কথা। হয়তাে বিস্মৃতি বা অন্য কোনাে কারণে এমনটা ঘটেছে। ইদানীং ভাষা আন্দোলনবিষয়ক কোনাে কোনাে রচনায় লক্ষণীয় নতুন প্রবণতা সংগঠনবিশেষের। গুরুত্ব বাড়াতে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানাের চেষ্টা। এ ধরনের চেষ্টা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে পাঠক-মহলে বিভ্রান্তি ছড়াতে সাহায্য করছে। তবু বলি, এসব ঘটনা ভাষা আন্দোলন বইটি লেখার কারণ নয়। কেননা, ভাষা আন্দোলনের সঠিক তথ্যনির্ভর ইতিহাস রচনার চেষ্টায় গত তিন দশকে অন্তত গােটা দুই বই তাে লিখেছি, এবং সব মিলিয়ে নানামাত্রিক গােটা চার-পাঁচ বই, যা ভাষা আন্দোলনের নানা দিক ও সংশ্লিষ্ট প্রশ্নাদি তুলে ধরেছে। এগুলাের মধ্যে একটির তৃতীয় সংস্করণে আন্দোলনবিষয়ক বিভ্রান্তিকর তথ্যের জবাবও যুক্ত হয়েছে। তাহলে কেন একই বিষয় নিয়ে আবার লেখা? এ প্রশ্নের জবাবটাই এ বইয়ের সম্ভাব্য পাঠকদের দিতে চাই। ফেব্রুয়ারি ২০০৯-এ প্রথম আলাের সম্পাদক ও উপসম্পাদকের অনুরােধে ফেব্রুয়ারির দিনপঞ্জি হিসেবে ভাষা আন্দোলনের ঘটনাবলি তাদের নির্ধারিত ছােটখাটো আকারে লিখতে শুরু করি। বলা চলে, ২১ দিনের রােজনামচায় ভাষা আন্দোলন। খুব সংক্ষেপে সঠিক তথ্যে ভাষা আন্দোলনের একটা ছবি আঁকার চেষ্টা; সেখানে ব্যক্তির মতামত নয়, সঠিক ইতিহাস তুলে ধরাই ছিল লেখকের উদ্দেশ্য।
প্রাবন্ধিক, কবি ও কলামিস্ট হিসাবে খ্যাত আহমদ রফিক, (জন্ম ১৯২৯) ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনীতির আকর্ষণে সমভাবে আলোড়িত ছিলেন। তিনি বাহান্নার ভাষা-আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে তার শিক্ষাজীবন বার বার বিপর্যস্ত হয়েছে। পেশাগতভাবে শিল্প ব্যবস্থাপনার সঙ্গে একদা যুক্ত থাকা সত্ত্বেও মননের চর্চাতেই তিনি অধিক সমর্পিত। এখন পুরোপুরি সাহিত্যকর্মে সক্রিয়। একাধিক সাহিত্য ও বিজ্ঞান পত্রিকার বিভিন্ন সামাজিক কর্মযজ্ঞে। রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র ট্রাস্টের তিনি প্রতিষ্ঠাতা, বাংলা একাডেমীর ফেলো এবং বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির জীবন সদস্য। তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে শিল্প সংস্কৃতি জীবন (১৯৫৮), আরেক কালান্তরে (১৯৭৭), বুদ্ধিজীবীর সংস্কৃতি (১৯৮৬), ভাষা আন্দােলন : ইতিহাস ও তাৎপর্য (১৯৯১), রবীন্দ্রনাথের চিত্রশিল্প (১৯৯৬), জাতিসত্তার আত্মঅন্বেষা (১৯৯৭), রবীন্দ্ৰভুবন পতিসর (১৯৯৮) এবং জীবনানন্দ : সময় সমাজ ও প্রেম (১৯৯৯)। নির্বাচিত কলাম (২০০০), বাংলাদেশ : জাতীয়তা ও জাতিরাষ্ট্রের সমস্যা (২০০০), একাত্তরে পাকবর্বরতার সংবাদ ভাষ্য (২০০১), কবিতা আধুনিকতা ও বাংলাদেশের কবিতা (২০০১)। কবিতাগ্রন্থের মধ্যে নির্বাসিত নায়ক (১৯৯৬), বাউল মাটিতে মন (১৯৭০), রক্তের নিসর্গে স্বদেশ (১৯৭৯), বিপ্লব ফেরারী, তবু (১৯৯৮), পড়ন্ত রোদুরে (১৯৯৪), Selected Poems (১৯৯৪), শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৯৮). ভালোবাসা ভালো নেই (১৯৯৯), নির্বাচিত কবিতা (২০০১) উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৯৭৯ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯২ সালে অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার পান। সাহিত্যক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদকে ভূষিত হন। কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে পেয়েছেন ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি ও স্বদেশে রবীন্দ্র পুরস্কার (১৪১৮) । এছাড়া অনেক কাঁটা প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা ও স্বর্ণপদক।