(রাসূলুল্লাহ (ছঃ) এর অনন্য সীরাত গ্রন্থ) (১৯৭৬ সালে করাচীতে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্ব মুসলিম সীরাত সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী সীরাতুন্নবী (ছঃ) রচনা প্রতিযােগিতায় ১১৮২টি পাণ্ডুলিপির মধ্যে প্রথম পুরস্কার বিজয়ী)
"আর রাহীকুল মাখতূম" বই সম্পর্কে কিছু কথাঃ আর রাহীকুল মাখতূম: একটি অনবদ্য সীরাত-গ্রন্থ। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাত পর্যালোচনায়, সীরাতের ঘটনামালার সুসংহত ও মনোজ্ঞ উপস্থাপনায় বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি সত্যিই এক নজিরবিহীন রচনা। আল কুরআনুল কারীম, হাদীসে নববী ও বিশুদ্ধ আছার এবং ঐতিহাসিক বর্ণনার নির্যাস বের করে প্রাজ্ঞ লেখক তাঁর এ বইটি সুবিন্যস্ত করেছেন। সীরাতবিষয়ে লিখিত প্রাচীন গ্রন্থাদি থেকেও তিনি বহু মণিমাণিক্য উপস্থাপন করেছেন যা ত্রুটিরহিত সংক্ষিপ্ততায়, সুখপাঠ্য দীর্ঘ আলোচনায়, অত্যন্ত চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন। সে হিসেবে, বইটি, বন্ধ্যাত্বের এই আধুনিক যুগে পূর্ণাঙ্গ ও পর্যাপ্ত তথ্যসমৃদ্ধ হয়ে পাঠকের সামনে হাজির হয়েছে। বইটি নির্ভরযোগ্যতার সর্বোচ্চ মানদণ্ড রক্ষা করে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র সীরাত উপস্থাপন করেছে, যা পাঠকের সামনে উজ্জ্বল করে দেয় সীরাতুল মুস্তাকীমের নিশানাসমগ্র। দেখিয়ে দেয় সীরাতুন্নাবী পাঠের সঠিক পদ্ধতি। এসব কারণে রাবেতায়ে আলামে ইসলামী কর্তৃক সীরাতুন্নবী গ্রন্থ-প্রতিযোগিতায় যুক্তিযুক্তভাবেই বইটি প্রথমস্থান অধিকার করে ১২৯৬ হি.সালে। গ্রন্থ রচনায় লেখক ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহের ধারাবাহিক বর্ণনা করেছেন এবং সেগুলোর বর্ণনায় তিনি বিভিন্ন অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়ে পর্যায়ক্রমিকভাবে বিন্যস্ত করেছেন। যেসব ঘটনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন গ্রন্থে মত পার্থক্য রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে লেখক সবকিছু পর্যালোচনা করে যেটি সঠিক মনে করেছেন সেটির উল্লেখ করেছেন। যেসব ক্ষেত্রে ভিন্ন মত পোষণকারীদের তথ্য লেখকের কাছে সঠিক মনে হয়নি সেসব ক্ষেত্রে তিনি যুক্তি প্রমাণের ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। আবার, তথ্যের উৎস হিসেবে গ্রন্থটিতে লেখক অসংখ্য গ্রন্থের নাম ও পৃষ্ঠা নম্বর উল্লেখ করেছেন। গ্রন্থের শুরুতে লেখক রাসূল এর আবির্ভাবের পূর্বে পৃথিবীতে বিরাজমান বিভিন্ন অবস্থা ও পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছেন। আরবের ভৌগোলিক পরিচয়, তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন জাতির অবস্থান, আরবের নেতৃত্ব ও শাসন ব্যবস্থা, আরবদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মতবাদ, জাহেলী সমাজের চারিত্রিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে লেখক এ পৃথিবীতে রাসূল এর আবির্ভাবের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। অতঃপর রাসূল এর পবিত্র ও সংগ্রামী জীবনের প্রতিচ্ছবির এক অনবদ্য উপস্থাপনা গ্রন্থটিকে করেছে প্রাণবন্ত। রাসূল এর দাওয়াতের বিভিন্ন কৌশল ও পর্যায় বর্ণনা হতে শুরু করে, বদর, ওহুদসহ বিভিন্ন যুদ্ধ, মক্কা বিজয়, বিদায় হজ্জ, রাসূল এর ওফাত পর্যন্ত সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনা বর্ণনার পর রাসূল এর পরিবারের পরিচিতি, রাসূল এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও শারীরিক সৌন্দর্য বর্ণনার এক ব্যতিক্রমী উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে লেখক গ্রন্থটির পরিসমাপ্তি টানেন।
আল্লামা সফিউর রহমান মুবারকপুরি (১৯৪৩-২০০৬) পুরো নাম সফিউর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ আকবর ইবনে মুহাম্মাদ আলি ইবনে আব্দুল মুমিন মুবারকপুরি আযমি। তিনি একজন স্বনামধন্য ইসলামিক লেখক এবং ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত মুহাদ্দিস। তার লেখা রাসূল সা.-এর জীবনীগ্রন্থ আর-রাহিকুল মাখতুম সারা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বহু ভাষায় অনুদিত একটি বই আধুনিক সিরাতগ্রন্থ। তিনি ১৯৪২ সালের ৪ জুন ভারতের আযমগড় জেলার হোসাইনাবাদের মোবারকপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তিনি স্থানীয় শিক্ষকদের কাছে লেখাপড়া করেন এবং আরবী ভাষা, ব্যকরণ, সাহিত্য, ফিকাহ, উসূলে ফিকাহ, তাফসির, হাদিস ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। ১৯৬১ সালে তিনি শরীয়াহ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন একই সাথে মাদরাসায় শিক্ষকতা এবং লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে মুবারকপুরের দারুত তালিম মাদরাসায় এবং ১৯৭৪ সালে বেনারসের জামিয়া সালাফিয়ায় শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৮ সাল হতে তিনি মদিনাস্থ আন্তজার্তিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাসূল সা. বিষয়ক গবেষণা ইন্সটিটিউটে কর্মরত থাকেন। সর্বশেষ রিয়াদের মাকতাবায়ে দারুস সালামে গবেষণার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া বেনারসের মাসিক মুহাদ্দিস পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেছেন। আরবী ও উর্দু ভাষায় তাঁর রচিত গ্রন্থসংখ্যা ত্রিশোর্ধ্ব। ২০০৬ সালের ১ ডিসেম্বর জুমাবার বেলা দু’টায় এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে এই মহান মনীষী মাওলার সান্নিধ্যে চলে যান।