বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ -সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী প্রত্যাদিষ্ট ধর্মগুলাের বুনিয়াদ খােদার অস্তিত্বের স্বীকৃতি এবং তাঁর একত্বের প্রতি বিশ্বাসের ওপর স্থাপিত। বর্তমানে ধর্ম-বিশ্বাসের প্রশস্ততম অংগনে এবং তার বাস্তব আকৃতিতে ইসলাম, খৃস্টবাদ ও ইহুদী ধর্মের মধ্যে যতই মতবৈষম্য থাকুক না কেন, খােদার অস্তিত্ব, তার প্রতি বিশ্বাস এবং ঐ একক সস্তাকে বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টা, মালিক, শাসক ও পরিচালক বলে স্বীকার করার ব্যাপারে এ তিনটি ধর্মই একমত। এজন্যে জড়বাদী ও নাস্তিক সমাজের মােকাবিলায় খােদার অস্তিত্বের প্রমাণ আমাদের সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষার বস্তু। এ কাজটি মুসলমান, খৃস্টান অথবা ইহুদী এঁদের যাকে দিয়েই সম্পন্ন হােক না কেন, তা আমাদের সবার মর্যাদালাভের অধিকারী। এ ব্যাপারে দার্শনিক, নীতিশাস্ত্রবিদ এবং ধর্মতত্ত্ববিদগণ এত প্রচুর পরিমাণে লিখেছেন যে, তা গণনা করা এবং সে সমস্তের উল্লেখ করা আয়াসসাধ্য নয়। কিন্তু বিজ্ঞানীগণ খুব কমই একে স্থায়ী আলােচ্য বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তাঁরা কাজ করে গেছেন। তাঁদের কাজের প্রবাব খােধার অস্তিত্ব স্বীকৃতির স্বপক্ষে অথবা বিপক্ষে গেছে, সেদিকে নজর দেননি তারা। তাই এ ব্যাপারটি নিয়ে সময়ে সময়ে বিচ্ছন্ন মতামত প্রকাশ করা ছাড়া তারা আর বেশি কিছু করেননি। বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিভাগে উচ্চ-নৈপুণ্যের অধিকারী চল্লিশজন বিজ্ঞানী নিজেদের বিদ্যা-বুদ্ধি, জ্ঞান ও তথ্যের ভিত্তিতে খােদার অস্তিত্ব সম্পর্কে এই সর্বপ্রথম বিশেষভাবে আলােচনা করেছেন। আশা করা যায়, বিজ্ঞানের অস্পষ্ট জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার দরুন যারা খােদাকে অস্বীকার করেন অথবা কমপক্ষে খােদার অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দিহান হন এবং খােদাকে স্বীকার করা অবৈজ্ঞানিক মনে করেন, তাদের জন্যে এগুলাে অত্যন্ত উপকারী প্রমাণিত হবে। এখানে তারা দেখবেন, একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী শুধু খােদার অস্তিত্ব স্বীকার করেই ক্ষান্ত হননি, বরং এর প্রমাণ স্বরূপ অকাট্য যুক্তি-তথ্য ও পেশ করেছেন। বিজ্ঞানের কোন অননুভূত ও অজ্ঞাত বস্তুর জন্যে যে যুক্তি-তথ্য পেশ করা হয়, এগুলাে ঠিক সেই পর্যায়ের। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, একদল দার্শনিক যেমন খােদাকে নিছক একটি শক্তি’ অথবা প্রথম বা আদি নিমিত্ত' (First Cause) অথবা বিশ্বজাহানের আত্মা’ মনে করেন কিংবা ধারণা পােষণ করেন যে, খােদা এই বিশ্বজাহানের কারখানাটিকে একবার চালিয়ে দেবার প্রয়ােজন পূর্ণ করে (তাঁর সৃষ্টি থেকে) পৃথক হয়ে গেছেন, এ বিজ্ঞানীগণ কিন্তু ঠিক তাঁদের সমগ্রোত্রীয় নন। বস্তুত এঁরা সবাই প্রত্যাদিষ্ট ধর্মসমূহে বর্ণিত খােদার অস্তিত্বকে স্বীকার করেন এবং যুক্তি-তথ্যের ভিত্তিতে তার স্বপক্ষে প্রমাণ পেশ করেছেন। তাঁদের খােদর সর্বজ্ঞ, শেষ্ঠজ্ঞানী এবং ইচ্ছাশক্তির অধিকারী। শুধু একবা সৃষ্টি করেই