بسم الله الرحمن الرحيم تخمه و نصلی علی رسوله الكريم * হালাল ও হারাম সম্পর্কে হালাল খাবার ব্যতীত কোন ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। আল্লাহ তাআলা নির্দেশ প্রদান করিয়াছেন, হে ঈমানদারগণ! তােমরা হালাল খাবার খাও। ঈমানদারদের মর্যাদার জন্য ইহাই যথেষ্ট যে, আল্লাহ তাআলা স্বীয় নির্দেশে নবীগণের সহিত ঈমানদারদিগকেও অন্তর্ভুক্ত রাখিয়াছেন। হালাল উপার্জনের অপরিহার্যতা হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হইতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করিয়াছেন طلب العلم فريضة على كل شيم ইলম অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয | উক্ত ফরয হৃদয়ঙ্গম করা যেমনিভাবে মস্তিষ্কের কাছে অন্যান্য ফরযের তুলনায় কঠিন তদ্রুপ ইহার প্রতি আমল করাও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাছে অতি কঠিন। এই জন্যই, ইহার ইলম ও আমল উভয়টিই দুনিয়াতে অস্তিত্বহীন হইয়া। পড়িয়াছে। বিশেষতঃ ইহার ইলম সূক্ষ্ম হওয়ার দরুন আমল আরাে অস্তিত্বহীন। কেননা জাহেলরা মনে করে দুনিয়াতে হালাল বিলুপ্ত এবং ইহার পথও রুদ্ধ। পৃথিবীতে নদীর পানি ও অমালিকানাধীন ভূমির উদ্ভিদ ব্যতীত হালাল বলিতে আর কোন বস্তু নাই। এই প্রকার জিনিস ছাড়া আর যত সম্পদ রহিয়াছে। সেইগুলি লেনদেন খারাপ হইয়া যাওয়ার দরুন অপবিত্র হইয়া গিয়াছে। যেহেতু নদীর পানি ও অমালিকানাধীন ভূমির উদ্ভিদের উপর যথেষ্ট বােধ করা যায় না,
বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ., সংক্ষেপে ইমাম গাজ্জালী ছিলেন একজন সুফিসাধক ও মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শিক্ষাবিদ, যিনি তাঁর দর্শন ও চিন্তাধারা বিশ্ব মুসলিমদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে ইসলামের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। তাঁর পারিবারিক ব্যবসা সুতা সংক্রান্ত হওয়ায়, সেখান থেকে তার নাম গাজ্জালী হয়েছে বলে ধারণা করা হয়, যেহেতু 'গাজ্জাল' শব্দের অর্থ সুতা। ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে (হিজরি ৪৫০ সাল) ইমাম গাজ্জালী ইরানের খোরাসান প্রদেশের অন্তর্গত তুস নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং এই তুস নগরীতেই তার শৈশবকাল ও শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়। তিনি ইসলামের স্বর্ণযুগে জন্ম নেন, যে যুগে শিক্ষা, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে মুসলমানরা অনেক এগিয়ে গিয়েছিলো। একইসাথে বিস্তার লাভ করেছিলো পাশ্চাত্য ও গ্রিক দর্শনেরও। ইমাম গাজ্জালী এসকল বিষয়েই দীক্ষা লাভ করেন এবং বিশেষ করে ঐ যুগের বিখ্যাত ধর্মতত্ত্ববিদ আলেম ইমামুল হারামাইন আল জুয়াইনির কাছ থেকে ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। মুসলিম দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, ফিকহশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে তিনি ছিলেন অত্যন্ত পারদর্শী । জ্ঞান-বিজ্ঞানের তীর্থস্থান বাগদাদের সেরা বিদ্যাপীঠ নিযামিয়া মাদ্রাসায় তিনি অধ্যাপনা করেন। তিনি তৎকালীন বাদশাহর দরবারেও আসন লাভ করেন। তবে সুফিবাদ ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের বিষয়ে তীব্র আকর্ষণ থাকায় তিনি জ্ঞান আহরণের জন্য দেশ-বিদেশ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন ও নানা বিষয় সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান অর্জন করেন। ইমাম গাজ্জালী রহ. বই রচনার মাধ্যমে তাঁর অর্জিত এসকল জ্ঞান মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ. এর বই সমূহ-তে তিনি আলোচনা করেছেন সুফিবাদ, ইসলামি দর্শন ও ধর্মতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে, এবং তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা চার শতাধিক। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ. এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'আসমাউল হুসনা', 'মিশকাতুল আনোয়ার', 'ফাতাওয়া', 'মিআর আল ইলম', 'হাকিকাতুর রুহু', 'দাকায়েকুল আখবার' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১১১১ খ্রিস্টাব্দে (৫০৫ হিজরি) তিনি নিজ জন্মভূমি তুস নগরীতে মৃত্যবরণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয় একজন মনীষী।