"বার চান্দের ফজিলত" বইয়ের ভূমিকা: সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ জন্য, যিনি মানুষকে শুধু তাঁরই ইবাদত বন্দেগী করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। সর্বশ্রেষ্ট ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মােস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর অসংখ্য দরূদ ও সালাম, যার উসিলায় আমরা আমলের ইলিম পেয়েছি এবং যা দ্বারা পরকালে মুক্তি পেতে পারি। ইসলামের মহান আদর্শ আমাদের সম্মুখে থাকা সত্বেও আমরা অনেক কাজে ইসলাম বিরােধী লােকদেরকে অনুকরণ করতে শিখেছি। বিশেষ করে যারা পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছেন তাদের অনেকেই ইসলামের আধ্যাতিক রীতি নীতি হতে দূরে সরে পরতেছেন। এ ছাড়া যারা ইসলামের পথে আছেন তারা বাজারের বিভিন্ন রকম ভুল তথ্য যুক্ত বই পুস্তক পড়ে বিপদগামী হচ্ছেন। তাই সবদিক বিবেচনা করে, মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে আমি বিভিন্ন সহীহ কেতাব বিভিন্ন অংশ থেকে এগ্রন্থটি সংকলন করেছি। মসজিদের সম্মানিত ইমাম সাহেবগণসহ অসংখ্য পরহেযগার নামাযী মুত্তাকী মুসুল্লিগণ বিশেষ করে মা বােনদের জন্য বার চাঁন্দের ফজিলত একটি গুরুত্ব পূর্ণ কিতাব। যা থেকে দেখে দেখে এক জন সাধারণ পাঠকও কোন মাসে কি আমল করতে হবে তা জেনে আমল করতে পারবেন। এমন একটি কিতাবের জন্য অনেক পাঠক আমাকে বিশেষ করে প্রকাশক সাহেবকে বহুদিন যাবৎ চিঠিপত্র ও ফোনে অনুরােধ করেছেন। সে তাগাদা থেকেই বহু কষ্টে অনেক শ্রমের বিনিময়ে এগ্রন্থটি প্রনয়ন করা হয়েছে। এতে বার চান্দের ফজিলত ছাড়াও জীবনের প্রায় সকল প্রয়ােজনীয় দোয়া দরূদসমূহ আমলিয়াত অজিফা গুলাে উচ্চারণ ও প্রয়ােজনীয় স্থানে অর্থসহ সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছি।
হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং এর গন্ডি পেরিয়ে যিনি হাজারো মানুষকে দিয়েছেন আত্মশুদ্ধি ও তাসাওউফ এর শিক্ষা। যার কারণে তাঁর উপাধি ছিলো ‘হাকীমুল উম্মাত’ বা উম্মাহর আত্মিক চিকিৎসক। উপমহাদেশে মুসলমানদের মাঝে সুন্নতের জ্ঞান প্রচারে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ‘দাওয়াতুল হক’ এর অবদানের জন্যও প্রসিদ্ধ মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর নাম। মাওলানা আশরাফ আলী থানভী ১৯ আগস্ট, ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে (রবিউস সানী ৫, ১২৮০ হিজরী) ভারতের উত্তর প্রদেশের থানাভবনে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই হাফেয হোসাইন আলী রাহ.-এর কাছে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাঁর শিক্ষাজীবন। নিজগ্রামেই ছোটবেলায় হযরত মাওলানা ফতেহ মুহাম্মদ থানভী রাহ.-এর কাছ থেকে আরবি ও ফার্সি ভাষার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১২৯৫ হিজরীতে তিনি দারূল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের উচ্চতর শাখাগুলোয় বিচরণ করার আগ্রহে। সেখানে তিনি পাঁচ বছর হাদীস, তাফসীর, আরবি সাহিত্য, ইসলামী দর্শন, যুক্তিবিজ্ঞান, ইসলামি আইন এবং ইতিহাস বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। দেওবন্দে শিক্ষার অধ্যায় সমাপ্ত করে মক্কা মুকাররমায় মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কীর কাছে কেরাত ও তাজবীদ শেখেন। তিনি কানপুরের একটি মাদ্রাসায় মাত্র ২৫ টাকা বেতনে শিক্ষকের পদ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে কানপুরের টপকাপুরে জামিউল উলূম মাদ্রাসার প্রধান পরিচালকের আসন অলংকৃত করেন এবং দীর্ঘ ১৪ বছর সেখানে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে তাঁর শিক্ষক হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কীর রহ. পরামর্শে তিনি থানা ভবনের খানকাহে ইমদাদিয়ায় অবস্থান গ্রহণ করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। সারা জীবনে আশরাফ আলী থানভী এর সকল বই এর হিসেব করতে গেলে ছোট-বড় মিলিয়ে তা সাড়ে বারো হাজার ছাড়িয়ে যায়। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমূহ এর মধ্যে ফিকাহ বিষয়ক বই ‘বেহেশতী জেওর’ উপমহাদেশের মুসলমানদের মাঝে বহুল পঠিত। এছাড়া তাঁর রচিত কুরআন শরীফের উর্দু তরজমার গ্রন্থ বয়ানুল কুরআনও (কুরআনের ব্যাখ্যা) এর ভাষা ও ব্যখ্যাশৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমগ্র এর স্বত্ত্ব তিনি জাতির কল্যাণে উন্মুক্ত করে রেখে গেছেন। জুলাই ১৯, ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে (১৬ রজব, ১৩৬২ হিজরী) আল্লামা থানভী রহ. তাঁর জন্মস্থান থানা ভবনেই মৃত্যুবরণ করেন।