প্রকাশকের কথা: মহান রাব্বুল আলামীনের অপর মেহেরবাণীতে মরনের আগে ও পরে কবরের খবর বইটির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে এবং এটি সম্মানিত পাঠক সমাজের হাতে তুলে দিতে পেরেছি বিধায় শোকরীয়া আদায় করছি। মানুষের জীবন যেমন শ্বাশত তেমনি মরনও অনিবার্য এক বাস্তবতা। প্রকৃতপক্ষে জীবনের আগেই মহান আল্লাহ তায়াল মানুষের মরনের সৃষ্টি করেছেন। কেন তিনি হায়াত ও মউতকে সৃষ্টি করেছেন তাও তিনি বলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, আমি হায়াত ও মউতকে তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য সৃষ্টি করেছি। আমি দেখতে চাই কে তোমাদের মধ্যে সৎকর্মশীল। কবরের জীবন মানুষের জন্য দুঃসহ এক জীবন । যে কবর হবে ভীষণ অন্ধকারময় স্থান। যে কবরে প্রতিটি মানুষকেই প্রবেশ করতে হবে। পার্থিব কোন সম্পদ কবরে মানুষের কোন উপকার আসবে না। কবরে মানুষের উপকারে যা আসবে তা হলো তার সৎকর্ম। সৎকর্মশীল মানুষের সাথে কবর ভালো ব্যবহার করবে। আর মানুষ যদি সৎকর্মশীল না হয় তাহলে কবরের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার পাওয়ার আশা করা যায় না। আমাদের কবরের জীবন যাতে শান্তিময় হয় এবং কি করলে শান্তিময় হবে এসব বিষয়ে এ বইয়ে কুরআন ও হাদীস শরীফের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বিভিন্ন উপমা ও উপদেশমূলক নিবন্ধের মাধ্যমে অতি সাবলিল ভাষায় ঘটনাবলীসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে। সম্মানিত পাঠক সমাজ মনোযোগ সহকারে বইটি পাঠ করলেই তা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি বইটি নির্ভুল করার। তারপরও ভুল ত্রুটি থাকা অস্বাভাবিক নয়। সম্মানিত পাঠকবর্গের চোখে কোন ভুল ধরা পড়লে আমাদের জানালে আমরা পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধন করার আপ্রাণ চেষ্টা করবো ইনশায়াল্লাহ! মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবার পরিশ্রম কবূল করুন। আমীন
বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ., সংক্ষেপে ইমাম গাজ্জালী ছিলেন একজন সুফিসাধক ও মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শিক্ষাবিদ, যিনি তাঁর দর্শন ও চিন্তাধারা বিশ্ব মুসলিমদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে ইসলামের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। তাঁর পারিবারিক ব্যবসা সুতা সংক্রান্ত হওয়ায়, সেখান থেকে তার নাম গাজ্জালী হয়েছে বলে ধারণা করা হয়, যেহেতু 'গাজ্জাল' শব্দের অর্থ সুতা। ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে (হিজরি ৪৫০ সাল) ইমাম গাজ্জালী ইরানের খোরাসান প্রদেশের অন্তর্গত তুস নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং এই তুস নগরীতেই তার শৈশবকাল ও শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়। তিনি ইসলামের স্বর্ণযুগে জন্ম নেন, যে যুগে শিক্ষা, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে মুসলমানরা অনেক এগিয়ে গিয়েছিলো। একইসাথে বিস্তার লাভ করেছিলো পাশ্চাত্য ও গ্রিক দর্শনেরও। ইমাম গাজ্জালী এসকল বিষয়েই দীক্ষা লাভ করেন এবং বিশেষ করে ঐ যুগের বিখ্যাত ধর্মতত্ত্ববিদ আলেম ইমামুল হারামাইন আল জুয়াইনির কাছ থেকে ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। মুসলিম দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, ফিকহশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে তিনি ছিলেন অত্যন্ত পারদর্শী । জ্ঞান-বিজ্ঞানের তীর্থস্থান বাগদাদের সেরা বিদ্যাপীঠ নিযামিয়া মাদ্রাসায় তিনি অধ্যাপনা করেন। তিনি তৎকালীন বাদশাহর দরবারেও আসন লাভ করেন। তবে সুফিবাদ ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের বিষয়ে তীব্র আকর্ষণ থাকায় তিনি জ্ঞান আহরণের জন্য দেশ-বিদেশ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন ও নানা বিষয় সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান অর্জন করেন। ইমাম গাজ্জালী রহ. বই রচনার মাধ্যমে তাঁর অর্জিত এসকল জ্ঞান মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ. এর বই সমূহ-তে তিনি আলোচনা করেছেন সুফিবাদ, ইসলামি দর্শন ও ধর্মতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে, এবং তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা চার শতাধিক। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ. এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'আসমাউল হুসনা', 'মিশকাতুল আনোয়ার', 'ফাতাওয়া', 'মিআর আল ইলম', 'হাকিকাতুর রুহু', 'দাকায়েকুল আখবার' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১১১১ খ্রিস্টাব্দে (৫০৫ হিজরি) তিনি নিজ জন্মভূমি তুস নগরীতে মৃত্যবরণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয় একজন মনীষী।